বাবু সিদ্ধান্ত, বর্ধমান ৭ এপ্রিল
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেশ জুড়ে জারি করা হয়েছে লকডাউন । আর লকডাউন জারি হতেই চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছেন ভিন রাজ্য ও ভিন জেলায় কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা।এমনই প্রায় তিন শতাধীক পরিযায়ী শ্রমিকের এখন ঠাঁই হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে। তাদের সবার মুখে অন্ন তুলেদিতে বিয়ের অনুষ্ঠানে খরচের জন্য রাখা পুরো অর্থ দিয়ে খাদ্য সামগ্রী কিনে প্রশাসনের হাতে তুলে দিলেন হবু দম্পতি অরিজিত পাল ও সঙ্গীতা ঘোষ । তাদের এমন মানবিক ভাবনার তারিফ না করে পারেন নি প্রশাসনের কর্তারা ।
জামালপুর ব্লকের আবুজহাটি ১ পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি হবু দম্পতি অরিজিত পাল ও সঙ্গীতা ঘোষের ।দুজনেই সমাজ কর্মী ।পরিবারের লোকজন আগামী ১৭ এপ্রিল তাঁদের বিয়ের দিন নির্দিষ্ট করেছেন । সঙ্গীতা ও অরিজিত এদিন বলেন ,মারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেশ জুড়ে জারি করা হয়েছে লকডাউন ।তার পর থেকে কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকরা নিজেদের বাড়ি ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন ।একই কারণে ভিন জেলায় কাজে যাওয়া শ্রমিকরাও উদগ্রীব হয়ে পড়েন ।
আরো পড়ুন – মাছখান্ডা গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষদের হাতে তুলে দিলেন খাদ্য সামগ্রী
কিন্তু লকডাউনে সমস্ত রকম গণ পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় মহা সংকটে পড়ে যান পরিযায়ী শ্রমীকরা । নিজের বাড়ি ফেরার জন্য এরপর বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকশো শ্রমিক রেল পথ ধরে হঁটা শুরু করেন ।একই কারণে সড়কপথ ধরে হাঁটা শুরু করেন আরো কয়েকশো শ্রমিক । গত ৩০ মার্চ বেলায় এই সকল শ্রমিক দলের একটা বড় অংশ পৌছায় জামালপুরের মসাগ্রামে।
বাকি কয়েকশো শ্রমিকের দল পৌছায় জামালপুরের জৌগ্রামে।এই খবর পাওয়া মাত্রই খাবার ও পানীয় জল নিয়ে ক্লান্ত ,পরিশ্রান্ত ও অভুক্ত শ্রমিকদের কাছে পৌছে যায় পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা ।
তবে বাড়ি ফেরা তাদের আর হয়ে হঠেনি । ওই দিন থেকেই ৩৬৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক দিন কাটাচ্ছেন জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে ।
হবু দম্পতি অরিজিত ও সঙ্গীতা জানান ,পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন দুরাবস্থার বিষয়টি স্বচোক্ষে দেখে তাঁরা নিজেরাও ব্যাথিত হন। এরপরেই ওই সকল পরিয়ায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁরা মনস্থির করে ফেলেন। সিদ্ধান্ত নেন শুধুমাত্র বিয়ের অনুষ্ঠান টুকু তারা করবেন। বাকি আর কোন অনুষ্ঠান তাঁরা করবেন না ।সেই সব অনুষ্ঠানের জন্য যে অর্থ খরচ হোত সেই অর্থ তাঁরা পরিয়ায়ী শ্রমিকদের অন্নসংস্থানের জন্য খরচ করবেন । নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা সোমবার জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারের কাছে গিয়ে জানান অরিজিত ও সঙ্গীতা। তাদের প্রস্তাব শুনে বিডিও সম্মতি না দিয়ে পারেন নি ।এর পরেই মঙ্গলবার হবু দম্পতি প্রার্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী কিনে ব্লক প্রশাসনের হাতে তুলে দেন ।
বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন , এই কঠিন সময়ে হবু দম্পতি অরিজিত পাল ও সঙ্গীতা ঘোষ প্রকৃত অর্থেই মানবিক দৃষ্টান্ত গড়লেন ।বিপাকে পড়েযাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য উনার যে স্বার্থ ত্যাগ করলেন তা এককথায় নজিরবিহীন বলাচলে ।বিডিও বলেন ,এই ভাবে সবাই যদি অরিজিত ও সংগীতার দেখানো পথে হাঁটেন তাহলে লকডাউনের মধ্যে আরো বহু মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া যাবে ।