আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

কেন্দ্রের সরকারকে ঠুঁটো জগন্নাথ বলে অবিহিত করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী

krishna Saha

Updated :

মুখ্যমন্ত্রী মমতা
WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান :- দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। তার আগে বুধবার বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কেন্দ্রের সরকারকে ’ঠুঁটো জগন্নাথ’ বলে অভিহিত করার পাশাপাশি ’বিধু’ বলেও তিনি কটাক্ষ করেন । ১০০ দিনের কাজের টাকা না দেওয়া নিয়েও প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সরকার কে এক হাত নেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্যে কয়েক হাজার শিক্ষকের চাকরি দেয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু সিপিএম ও বিজেপির পান্ডারা তা হতে দিচ্ছে না।

রাজ্যের পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমানকে নিয়ে এদিন বর্ধমানের গোদার মাঠে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ১৮২ টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৩১৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নতুন যেসব প্রকল্পের কাজ হবে তার শিলান্যাস করেন। তৃণমূল সরকারের ১২ বছরে রাজত্বে হওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এবং বিভিন্ন সরকারি সহায়তা প্রদানের কথা প্রশাসনিক সভা থেকে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের কত সংখ্যক মানুষ এখনো পর্যন্ত এইসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন তার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী এক ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের কত সংখ্যক মানুষ নতুন করে কোন কোন সরকারি প্রকল্পের সহায়তা পেতে চলেছেন সেই তথ্যও মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা থেকে তুলে ধরেন।

মুখ্যমন্ত্রী তিনি জানান,দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প ও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন এমন বিপুল সংখ্যক মানুষ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছটি বিশেষ প্রকল্পের সুবিধা পেতে চলেছেন। তারমধ্যে রাজ্যের আরও ১৩ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার পেতে চলেছেন। এছাড়াও আরো ৯ লক্ষ মানুষ বার্ধক্য ভাতা এবং ১ লক্ষ ৪ হাজার মহিলা বিধবা ভাতা পাবেন। আর মানবিক ভাতা পাবেন আরো ৭ হাজার জন এবং কন্যাশ্রী প্রকল্পে আরো ১০ লক্ষ সংযুক্ত হবে। পাশাপাশি রূপশ্রী প্রকল্পেও আরও ৮৫ হাজার জন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সংযুক্ত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন।

See also  সাংসদ সৌমিত্র খাঁ গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি

প্রকল্পের সহায়তা প্রদানের তথ্য তুলে ধরার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন,বাংলার মানুষের জন্য এত কিছু আমরা করছি। তবুও অনেকে বলে আমরা নাকি কিছুই করছি না। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আমাদের মত এত সমাজ সংস্কার, এত সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন সারা পৃথিবীতে কেউ করতে পারেনি। এর জন্য আমরা গর্বিত।“কন্যাশ্রীরা আমার গর্ব। রাজ্যের দু কোটি মহিলা লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পায়। শিক্ষাশ্রী পায় ১ কোটি ১৭ লক্ষ মানুষ। এছাড়াও রাজ্যের ৮ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা পায়। এসব ছাড়াও কৃষক বন্ধু, সবুজ সাথী ও সমব্যথী প্রকল্পের সুবিধাও মানুষ পেয়ে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী তরফে রূপশ্রী দের একটি করে বেনারসি শাড়ি এদিন দেওয়া হয়।

প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই রাজ্যে চাকরির আর কোন প্রবলেম থাকবে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আমরা রাজ্যে ডেভলপমেন্ট বোর্ড তৈরি করেছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের ডেভলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার এবং ভোটের সময় ভোটটা দিতে আসার জন্যও মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান।রাজ্য সরকারের শস্য বিমার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে চাষিদের চিন্তিত না হওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সূর চড়ান। তিনি বলেন,“আমরা এত কিছু করছি।আর কেন্দ্রীর সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ। রাজনৈতিকভাবে ওরা ঠুটো। ওদের বাক্সটা একদিন হয়ে যাবে ফুটো। ওরা বলছে,ওরা নাকি ঘরে ঘরে জল দিচ্ছে। কিন্তু কিন্তু আপনারা জানেন কি,“বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর কাজটা আমরাই করি। যে জমি দিয়ে জলের পাইপ যাবে সেই জমিটা আমরাই কিনি। রক্ষণাবেক্ষণ টাও আমরাই করি। আর ওরা শুধু মাছের তেলে মাছ ভাজে“।আর এখান (বাংলা) থেকে জিএসটি ট্যাক্স কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা সবাইকে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেবে বলেছিল। নির্বাচন আসলে ওরা গ্যাসের দাম একটু কমিয়ে দেয়। আর ভোট মিটে গেলেই গ্যাসের দাম আরো বেশি করে বাড়িয়ে দেয়।

See also  ছাত্রের মৃত্যুর তদন্তে এলো ফরেন্সিক টিম বর্ধমানে

মুখ্যমন্ত্রী ও বলেন,“রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে টাকা চাওয়া হলেই ওরা বলে টাকা দেব না। বিজেপিও বলছে টাকা দেবো না। আমি জানতে চাইলাম কেন টাকা দেওয়া হবে না। তখন ওরা বলছে,সব জায়গায় গেরুয়া রং করতে হবে। গেরুয়া পোষাক তো সাধু-সন্তরা পড়েন, সেটা তাদের অধিকার। এর পরেই কোন বিজেপি নেতার নাম মুখে না এনে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা কোন সাধু? আপনারা তো বিধু। আপনারা তো শুধু মানুষকে বিঁধতে জানেন“।মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ওরা এখন আবার বলছে, আর ছয় মাসের জন্য চাল দেবে। তার ব্যাগে ওদের ছবি আর পার্টির লোগো থাকবে। আমি বলেছি ও সব হতে দেবনা“।

রাজ্যকে ১০০ দিনের কাজের টাকা না দেওয়া নিয়েও এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,“আমাদের রাজ্য থেকে জিএসটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে অথচ একশ দিনের কাজে আমাদের রাজ্য সরকারের পাওনা ৭০০০ কোটি টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না”। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন,“ওরা ধর্মের নামে ছুটি দেয়। কিন্তু যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দেশের স্বাধীনতার জন্য এত কিছু করেছেন তার জন্মদিনে ছুটি দেয় না। দেশের স্বাধীনতার জন্য সবথেকে বড় অবদান বাংলার রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দিন দাবি করেন।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গ দূরে সরিয়ে রেখেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন,”হাজার হাজার শিক্ষক আমরা নিয়োগ করবো বলে সব রেডি রয়েছি।কিন্তু আটকে রেখে দিয়েছে সিপিএম আর বিজেপির কয়েকটা পান্ডা। ওরা কোর্টে চলে যাচ্ছে। নযতো ৬০-৭০ হাজার ছেলেমেয়ে শুধু স্কুলে চাকরি পেয়ে যেত। আমরা চাই যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তবে কোর্ট তার রেকটিফাই করে দিক। মহামান্য আদালতের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন রাখেন’ “দ্রুত ভেকেন্সি গুলো যাতে ফিলাপ করা যায়, তার ব্যবস্থা করে দিন“।

এদিকে এদিন বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলেও ,সভা সেরে কলকাতায় ফেরার সময় মুখ্যমন্ত্রীকে নানা বাধা বিঘ্নর মুখে পড়তে হয় ।
এদিন বেলায় হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের হেলিপ্যাড থেকে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে চেপে বর্ধমানে আসেন।বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা সেরে
আবার হেলিকপ্টারে চেপেই মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতায়
ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় হেলিকপ্টারের বদলে সড়কপথেই মু্খ্যমন্ত্রীর কলকাতা ফেরার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মত সভাস্থল থেকে হেঁটে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গাড়িতে উঠে চালকের পাশের আসনে বসেন। গাড়ি কলকাতার পথে রওনা দেবার সময় বৃষ্টি পড়ছিল ।

See also  বর্ধমান গ্রীন হান্টার, রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও দক্ষিণ দামোদর প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে সুন্দরবনে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ

ছিল কুয়াশাও জিটি রোড দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সনয় গতীর হের ফেরের জেরে গাড়িতে ঝাঁকুনি হয়। সেই কারণে
মুখ্যমন্ত্রী কপালে সামান্য আঘাত পান। কলকাতায় পৌছে মুখ্যমন্ত্রীর জানান,কলকাতায় পৌঁছে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী তার মাথায় আঘাত লাগার কথা জানিয়ে দেন ।একই সঙ্গে তিনি জানান, “একটা গাড়ি প্রায় ২০০ স্পিডে যাচ্ছিল। সেটা দেখে আমার গাড়ির চালক জোরে ব্রেক বসে। তখন গাড়ির ড্যাশবোর্ডে আমার মাথা ঢুকে যায়। বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছি।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি