আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

ছায়া যিনি নিজেই ছিলেন আশ্রয়: ‘দুখিনী’ নন, পরিপূর্ণ জীবনের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি কনক ওরফে ছায়া দেবী

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

কৃষকসেতু, কলকাতা:- একলা নারী মানেই তিনি অবলা, অসহায় বা করুণার পাত্রী—এই সামাজিক মিথ একশো বছর আগেই ভেঙে দিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ছায়া দেবী। তাঁর আসল নাম কনকবালা গাঙ্গুলি। প্রিয়জনেরা ডাকতেন কনক বলে। কিন্তু সারা বাংলা তাঁকে চেনে ছায়া নামে। যিনি শুধু আশ্রয় নেননি, বরং আশ্রয় দিয়েছেন — বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে ছিলেন সকলের পাশে।

১৯১৪ সালের ৩ জুন, ভাগলপুরের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম কনকের। বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতায় চলে আসার পর উত্তর কলকাতার মদন ঘোষ লেনে বসবাস। পাশের বাড়িতে থাকতেন সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে, তাঁর কাছেই শুরু সঙ্গীতের পাঠ। সহপাঠী ছিলেন মান্না দে। শাস্ত্রীয় সংগীত, উচ্চাঙ্গ নৃত্যে সমান পারদর্শী কনক ছিলেন প্রকৃত অর্থেই চারুশিল্পে সিদ্ধহস্ত। পরে অভিনয় জগতে পা দিয়ে হয়ে উঠলেন ছায়া দেবী—বাংলা সিনেমার এক অপরিহার্য মুখ।

ছোট বয়সে ঘটে যাওয়া সংক্ষিপ্ত এক বিয়ের কথা নিয়ে আজ নানা গল্প রটেছে। কিন্তু পরিবারের বক্তব্য স্পষ্ট—ছায়া দেবী কোনওদিন ‘জনমদুখিনী’ ছিলেন না। এই কথাটিই পরিষ্কার করে জানালেন তাঁর ভাইপো পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পিসি সারাজীবন আনন্দে ছিলেন। বিয়ে না থাকলে জীবন অপূর্ণ হয় না, এটা পিসিই প্রমাণ করে গিয়েছেন। ভুল তথ্যে পিসির জীবনকে করুণ করে তুলবেন না কেউ”।

ঠিক এই বার্তাই দিলেন আর এক ঘনিষ্ঠ, তনুশ্রী রায় ভট্টাচার্য, যিনি একসময়ের জনপ্রিয় শিশু শিল্পী ঝুমকি। স্বর্ণযুগে বিখ্যাত রুমকি-ঝুমকি জুটির ঝুমকি। আর রুমকি, যাঁর ডাকনাম ছিল চুমকি, বড় হয়ে হয়েছিলেন নায়িকা দেবশ্রী রায়। এই দুই কন্যাকেই নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছিলেন নিঃসন্তান ছায়া দেবী। তাঁদের কাছেই তিনি ছিলেন ‘আদরের কনক’। শেষ দিন পর্যন্ত তাঁরা পাশে থেকেছেন, ভালবাসায় আগলে রেখেছেন। সেখানে কোনও একাকিত্ব ছিল না, ছিল না দুঃখবোধের গভীর ছায়া।

ছায়া দেবীর চলচ্চিত্র কেরিয়ারও ঈর্ষণীয়। প্রথম ছবি ‘পথের শেষে’-তেই নজরে পড়লেন পরিচালক দেবকী কুমার বসুর। এরপর ‘বিদ্যাপতি’, ‘সোনার সংসার’-এর মতো ছবিতে মুখ্য চরিত্র। তাঁর অভিনয় ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছিল গোটা ভারত। ‘রিক্তা’ ছবিতে তাঁর পারফরম্যান্স, এমনকি প্লেব্যাক গানও শ্রোতাদের মন জয় করেছিল।

See also  কৃষক সেতু ' নিউজ ' এক নজরে

ছায়া দেবী ছিলেন সেই বিরল মানুষ, যাঁর জীবন ছিল নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত। তাঁর জীবন ছিল আত্মসম্মান, স্বাধীনতা ও ভালবাসার এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত। সমাজ যাঁকে দুঃখিনী হিসেবে দেখতে চেয়েছে, তাঁরাই আজ নির্ভর করে তাঁর ছায়ায়। কারণ তিনি কেবল নামেই ‘ছায়া’ নন, তিনি ছিলেন সাহস, আত্মশক্তি আর স্বকীয়তার প্রতীক।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি