চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছুঁতেই উচ্ছ্বাসে মাতল পাত্রসায়রের ডান্না গ্রাম। তার কারণ ওই ডান্না গ্রামেরই বাসিন্দা কৃশানু নন্দী ইসরোর ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান অভিযানে কৃশানু প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। শুধু তাই নয়। ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর তাকে চাঁদের বুকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ইসরোর অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কৃশানুও রয়েছেন। এদিন গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে সন্ধ্যার পর থেকে বাসিন্দাদের চোখ ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪মিনিট নাগাদ ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটি স্পর্শ করা মাত্রই আবেগে ভাসেন তাঁরা।
অনেকেই হাততালি দিয়ে উচ্ছাসে ফেটে পড়েন। সেই সঙ্গে তাঁদের গ্রামের ছেলে কৃশানুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে তাঁদের মন। ইসরোর এতবড় একটা মিশনের সাফল্যের অংশিদার তাঁদের গ্রামের ছেলের কৃশানু। তাই কৃশানুর পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরা ভীষণ আনন্দিত।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় কৃষক তারাপদ নন্দীর ছেলে কৃশানু।
তিনি পাত্রসায়রের বামিরা গুরুদাস বিদ্যায়তন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ছাতনার কমলপুর নেতাজি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর কলকাতার একটি কলেজ থেকে বিটেক এবং পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমটেক করেন। তারপর তিনি ইসরোয় ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বেঙ্গলুরুতে চাকরি পান। ৩২ বছরের কৃশানু চন্দ্রযান-২ অভিযানে ছিলেন না।
কৃশানুর পরিবারের সদস্যরা এনিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। তবে তাঁরা দেশের সাফল্যে ছেলে অংশিদার হওয়ায় ভীষণ আনন্দিত বলে জানিয়েছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃশানুর ছোট থেকে চাঁদের প্রতি আকর্ষণ ছিল। পরবর্তীকালে তিনি মহাকাশ বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তাঁর দিদি টিউশন পড়িয়ে ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ জুগিয়েছেন। তাছাড়াও কৃশানু পড়াশুনায় খুব ভালো হওয়ায় স্কলারশিপও পেয়েছেন। এমটেক পড়ার সময়েই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি পরীক্ষা দেন। তারপর ইসরোতে চাকরি পান। বর্তমানে তিনি বেঙ্গালুরুতে কর্মরত রয়েছেন। ইসরোর মাধ্যমে চাঁদের মাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করার তিনি সুযোগ পেয়েছেন। ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় কৃশানুর পরিবারের সদস্যরা ভীষণ খুশি।
কৃশানুর সহপাঠী পাত্রসায়রের দিব্যেন্দু দাস বলেন, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন থাকলেও মাটির টান কৃশানুকে গ্রামে টেনে আনে। ছুটি পেলেই তিনি বাড়িতে চলে আসেন। গ্রামের বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল হন। মহাকাশ সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বন্ধুদের কাছে শেয়ার করেন। সেই ছেলে আজকে এতবড় মিশনের অংশিদার। ওর জন্য আমাদের বুক গর্বে ভরে উঠেছে।