প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বসেছেন শমীক ভট্টাচার্য। মাস কয়েক ধরেই তাঁর নাম ছিল জল্পনায়, এবার সেই জল্পনাতেই সিলমোহর দিল দিল্লি। তবে এটা যেন নিছক দিল্লি সফর, নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক আর কলকাতায় ফিরে এসে চেয়ার দখলের গল্প নয়। বরং এর পিছনে রয়েছে কৌশল, রাজনীতির অঙ্ক এবং ২০২৬-এর ভোটের রণকৌশল।

রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রথম কারণ—শমীক আদ্যোপান্ত বাঙালি। ভাষাজ্ঞান, সাংবাদিক সামলানোর দক্ষতা, প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের সাহচর্য—সব মিলিয়ে তাঁর ব্যক্তিত্বে রয়েছে সাংগঠনিক নেতৃত্ব দেওয়ার মতো পরিপক্কতা। রাজ্য বিজেপির পুরনো ও নতুনদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো, সংগঠনকে গুছিয়ে ফের চাঙ্গা করা—এই লক্ষ্যেই শমীক ভট্টাচার্যকে সেনাপতির আসনে বসানো হয়েছে।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির বহু পুরনো নেতাকে পাশে না রেখে প্রার্থী করা হয়েছিল তৃণমূল ছেড়ে আসা অনেককে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দলের একাংশ, যাঁরা পরে ঘরেই বসে যান। সেই ‘আদি’ বিজেপির নেতা-কর্মীদের ফেরাতে এবং মন জোগাতে এই সিদ্ধান্ত, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শমীক ভট্টাচার্য শুরু থেকেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। হাওড়ায় যুব মোর্চার সভাপতি হিসেবে শুরু করে এখন রাজ্যসভার সাংসদ। সেই আনুগত্য ও নিষ্ঠাই এবার তাঁকে রাজ্য সভাপতির পদে নিয়ে এল।
তিনি নিজে কোনওদিন দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি, বরং দলে থেকেই কাজ করে গিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ইতিবাচক। ফলে নেতৃত্বের মধ্যে কোনও সংঘাতের সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে করছে বিজেপির অন্দরমহল।
তবে সবটা যে মসৃণ, তা নয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন—তৃণমূলের মতো শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতটা কড়া লড়াই দিতে পারবেন আপাত নরম মেজাজের শমীক ভট্টাচার্য? সেই নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে বিজেপি নেতৃত্বের আশা, ভাষার দখল ও রাজনৈতিক কৌশলে তিনি এই চ্যালেঞ্জ সামলে নিতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, দুর্নীতির অভিযোগে ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিক নিষ্ঠা, ভাষার দক্ষতা আর পুরনোদের ফেরানোর বার্তা—এই সব মিলিয়ে ২০২৬-এর আগেই রাজ্য বিজেপির ‘স্টিয়ারিং’ শমীক ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।