প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৮ জুলাই

বর্ষা নামতেই ’জলাভূমির’ রুপ নিয়ে নিয়েছে গোটা স্কুল।জল থই থই সেই স্কুলের ক্লাস রুমে দাঁড়িয়েই পড়ুয়াদের পাঠ দিতে হচ্ছে শিক্ষদের। আর জলে পা ডুবে থাকা অবস্থার মধ্যেই ক্লাস রুমের বেঞ্চে বসে শিক্ষকের পাঠ গ্রহন করছে পড়ুয়ারা। না,এটা
কোন অপপ্রচার বা গল্পকথা নয়।এটাই পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের ’কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ এখনকার বাস্তব অবস্থা।
প্রায় এক দশক কাল ধরে বর্ষার মরসুমটা এভাবেই কাটছে স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের।এমন অবস্থা থেকে ’পরিত্রাণ’ পেতে স্কুলের সকলেই প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়ে আছেন।কিন্তু পরিত্রাণ কবে মিলবে,তার উত্তর তাদের কাছে আজও অজানাই রয়ে আছে।
কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সলে
প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চারটি শ্রেণীকক্ষ বিশিষ্ঠ এই বিদালয়টি কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের গীধগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয়।তাই বয়সের ছাপও ফুটে উঠেছে বিদ্যালয়ের কোনায় কোনায় ।বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে পড়ুয়া সংখ্যা ৮১ জন।এই সকল পড়ুয়াদের পাঠ দানের জন্য রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়াদের পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়ে রয়েছে চারটি শ্রেণীকক্ষ। বছরের অন্যান সময়ে এই বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন সহ সবকিছু স্বাভাভিক থাকে। কিন্তু বর্ষা নামলেই দুর্ভোগ চরমে ওঠে এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের।
বাংলায় এখন বর্ষাকাল চলছে।তাই লাগাতার বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। সোমবার এই বিদ্যালয়ে পৌছে দেখা গেল,গোটা বিদ্যালয় চত্ত্বর জলে থই থই করছে। ক্লাস রুম গুলিতেও জমেছে জল।প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে সেই জলের মধ্যে দাঁড়িয়েই পড়ুয়াদের পড়াচ্ছে শিক্ষক মশাই।আর সেই শ্রেণীকক্ষে ভরে থাকা জলে পা ডুবে থাকা অবস্থায় বেঞ্চে বসে শিক্ষক মহাশয়ের দেওয়া পাঠ গ্রহন করছে পড়ুয়ারা।বিষয়টা এমন যেন,কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা এই ’দুর্ভোগকেই’ তাঁদের ভবিতব্য ধরে নিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামবরন দাস বলেন,“প্রায় এক দশক ধরে এমন জলযন্ত্রণা আমাদের ভোগ করে যেতে হচ্ছে। বর্ষা নামলেই আমাদের বিদ্যালয় একেবারে বানভাসী হয়ে যায়।ক্লাস রুম থেকে শুরু করে স্কুল প্রাঙ্গন ,সবই ভরে যায় জলে। এবছরও একই অবস্থা। বর্ষা নামতেই গোটা স্কুল বানভাসী রুপ নিয়ে নিয়েছে“। এই জল যন্ত্রনার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছেন কি না
জানতে চাওয়া হলে রামবরন বাবু বলেন,“বহুবার প্রশাসন ও স্কুল দফতরকে জানানো হয়েছে।তার পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাস অনেক মিলেছে।তবে দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন ব্যবস্থা এখনো অব্দি গৃহীত হয় নি।
বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষক রতন মল্লিক বলেন,’বর্ষা আসলেই আমাদের স্কুল কার্যত ’জলাভূমির’ রুপ
নিয়ে নেও।ক্লাস রুম থেকে শুরু করে স্কুলের বারান্দা,সর্বত্র এখন থই থই করছে। প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে জল থই থই ক্লাস রুমে দাড়িয়ে পড়াতে হচ্ছে।
ক্লাসে একই রকম জল যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে পড়ুয়াদের।বছরের পর বছর ধরে বর্ষায় এমন দুর্ভোগ সহ্য করেই যেতে হচ্ছে।উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে
জানানো হলেও কোন সুরাহা না মেলায় শিক্ষক রতন মল্লিক যারপরনাই হতাশ।
এলাকার বাসিন্দা স্বপন সাঁতরা সহ অনেক বলেন,
বর্ষা সবে শুরু হয়েছে,তাতেই গোটা স্কুল এখন কার্যত বানভাসী।প্রতি বছর বর্ষায় স্কুল এভাবে বানভাসী হয়ে যাচ্ছে।স্কুলের ক্লাস রুমও এখন জলমগ্ন।কোন উপায় না থাকায় ওই ক্লাসরুমে বসেই পড়ুয়াদের পড়াশুনা করতে হচ্ছে।বর্ষা বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’ পুরানো স্কুল বিল্ডিং ভেঙে উঁচু করে নতুন স্কুল বিল্ডিং তৈরি না হলে এই দুর্ভোগ থেকে নিস্কৃতি মিলবে না।তাই আমরা চাই,পড়ুয়াদের মুখ চেয়ে প্রশাসন অবিলম্বে নতুন স্কুল বিল্ডিং তৈরির ব্যবস্থা করুক।

কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুরাবস্থার
বিষয়টি মেনে নিয়েছেন,কাটোয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির নারী,শিশু ও জনকল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ তৃষা চট্টোপাধ্যায়।তিনি খুদে পড়ুয়াদের জল যন্ত্রণা ভোগ করার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন ,’খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধান হবে।“
জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান
মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,“ছবি সহ স্কুলটির বর্তমান
সমস্যাা বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত ভাবে লিখে আমাকে পাঠাক। আমি সেটা শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে পাঠাবো। আশাকরি তাতে দ্রত সমস্যার সামাধান হবে।“