আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

প্রায়শ্চিত্ত

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

গল্প –
প্রায়শ্চিত্ত

সুদীপা ব্যানার্জী

রাধামাধবের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে পুজোর ফুল নিবেদন করার সময় অসাবধানতায় শিউলির হাত লেগে পড়ে গিয়েছিল সিংহাসনের উপর রাখা শালগ্রাম শিলাটি । শিউলি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি শালগ্রাম শিলা তুলে সিংহাসনে রাখতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে মন্দিরের নিত্য পুজারি ধীরেন চক্রবর্তী চেঁচিয়ে উঠলো হায় হায় হায় একি অলক্ষুণে কাণ্ড; ঘোর পাপ নেগেছে গো মন্দিরে । কি সব্বনাশ কি সব্বনাশ। বলি কে কোতায় আচো গো শিগ্‌গির এসো সবাই দেকো গো এই ছোটনোকের বিটি কি কাণ্ড ঘট্টেচে । ধীরেন বামুনের এরকম হাঁড়িচাচা গলার চিৎকার শুনে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে ছুটে মন্দিরে উপস্থিত হলো গাঁয়ের মানুষ ।

ধীরে ধীরে গোটা গ্রাম ভেঙে পড়লো মন্দির প্রাঙ্গণে । শিউলি জন্ম থেকেই বোবা তাই কোন কথা বলতে না পেরে থতমত খেয়ে এক কোনে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে । গাঁয়ের সবাই ধীরেন চক্রবর্তী কে কি হয়েছে জানতে চাইলে সে কপাল চাপড়ে বললো ঘোর সব্বনাশ গো , ঘোর সব্বনাশ । এই ছোটলোকের বিটি শালগ্রাম শিলায় হাত দিয়েচে । যেকেনে মেয়ে মানুষের এই শালগ্রাম শিলায় হাত দেবার অদিকার টুকুন নেইকো সেকেনে এই শূদ্রের বিটি শালগ্রাম শিলা অপবিত্রি করে দিলে গো । ওরে পাপিষ্ঠা আমাদের বামুনের ঘরের বউ- ঝি গুলোরও এই শিলায় হাত দেওয়া নিষেদ । তুই কি করে এমন অনাছিষ্টি কাজ করলি বল দিকিনি ;

ভীড় ঠেলে শিউলির বাবা নিতাই এসে ধীরেন চক্রবর্তীর পা দুটো ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো ও ছোট মেয়ে ঠাকুরমশাই ।না বুজে একখানা ভুল করে ফেলেচে ওকে ক্ষ্যামা করে দিন এবারের মতো । ধীরেন এক ঝটকায় নিজের পা থেকে নিতাইয়ের হাত দুটো সরিয়ে একটু তফাতে গিয়ে বললো না না এটা কোন ছোটখাটো ভুল নয় । শালা শূদ্রের ব্যাটা শালগ্রাম শিলায় হাত দেবার ফল কি হয় তা জানিস ? সব ধ্বংস হয়ে যাবে । তোরা সবাই মরবি পাপে । দয়া করুন ঠাকুরমশাই দয়া করুন এই বলেই আবার নিতাই ধীরেন চক্রবর্তীর পা গুলো আবার ধরলো । ধীরেন এবার একটু নরম স্বরে বললো একটা উপায় আচে , কি উপায় চক্রবর্তী মশাই ? গোটা গাঁয়ের লোক বলে উঠলো ।

See also  দামোদর নদে বালি চুরির বিরুদ্ধে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের যৌথ অভিযান

একটু গম্ভীর হয়ে চক্রবর্তী বললো এই বিটি কে পায়শচিত্তি করতে হবে । তবেই যদি নারায়ণের ক্ষোভ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । তা নইলে কিন্তু এই বিটিও পাপে মরবে আর তার সাতে সাতে মরবে গোটা গাঁয়ের নোক । গাঁয়ের সবাই একসাথে নিতাই কে বললো ঠাকুরমশাই যা বলছেন তাই করো নিতাই । ঐ মেয়েকে দিয়ে পায়শচিত্তি করাও । তোমার মেয়ের ভুলের জন্যি তো আর আমরা পাপে ভুগতে পারিনা । ঠাকুর মশাই আপনি বলুন কি করতে হবে শিউলি কে । চক্রবর্তী বললো শোন নিতাই আজ রেতের বেলা তোর মেয়েকে আমার বাড়িতে পাটাস খন । বড়ো একখানা যজ্ঞ করতি হবে ।

আমার কতার খেলাপ যেন না হয় , তা হলেই কিন্তু —-
চক্রবর্তীর মুখের কথা শেষ না হতেই নিতাই বললো আজ্ঞে আপনি যেমনটা বললেন তেমনটাই করবো ঠাকুরমশাই ।হুমম এই বলে চক্রবর্তী মন্দির ছেড়ে চলে গেল । আস্তে আস্তে মন্দির খালি হয়ে গেল । রাতের বেলা চক্রবর্তীর কথা মতো মেয়ে শিউলি কে নিয়ে নিতাই গেল চক্রবর্তীর বাড়ি । একবার ঠাকুরমশাই বলে ডাক দিতেই চক্রবর্তী বেরিয়ে এসে বললো ও এয়েচিস তাহলে ।মেয়েকে নাইয়ে এনেচিস ত নিতাই ? আজ্ঞে হ্যাঁ ঠাকুরমশাই আপনি যেমনটি বলেচেন ঠিক তেমনটি করেই । আচ্চা তুই একন বাড়ি যা ভোর হলে মেয়েকে এসে নিয়ে যাস খন । নিতাই বলে বলচি ঠাকুরমশাই আমি কি একেনে থাকতে পারবোনি ? ওরে না রে বাপু না এটা হলো গিয়ে পায়শচিত্তি করার মহাযজ্ঞ। তুই একেনে থেকে কি করবি শুনি যাঃ দূর হ ।বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ভোরবেলা মেয়েকে নিয়ে যাবি একন আর বিরক্তি করিস নি যা দিকিনি ।

যাচ্চি ঠাকুরমশাই । আমার মেয়েটাকে ভালো করে শুদ্ধি করে দিন যেন আর পাপের ভয় না থাকে মা মরা ঐ বোবা-কালা মেয়ে আমার ও ছাড়া আমার আর কে আচে বলুন এই বলে কেঁদে ফেলে নিতাই । ওরে বাপু তোর কোন চিন্তা নেই যজ্ঞ করলে আর কোন পাপ নাগবে না এবার তুই যা, আর হ্যাঁ আমার দক্ষিণা টা দিয়ে যা । নিতাই বলে কত দক্ষিণা ঠাকুরমশাই ? পাঁচশো এক ট্যাকা । এত ট্যাকা? আমি তো একন আনিনিকো ভোরবেলা এসে দিয়ে যাবো খন
তাই দিবি একন দূর হ দিকি ।
এই বলে চক্রবর্তী শিউলি কে নিয়ে ঘরে ঢুকলো । বোবা অসহায় মেয়ের সাথে সারারাত ধরে চললো পৈশাচিক অত্যাচারের যজ্ঞ । গভীর রাতে শিউলির বোবা কান্না কালপেঁচা ছাড়া শুনতে পেলনা কেউ । চক্রবর্তী তার লালসার যজ্ঞের আগুনে পুড়িয়ে মারছে শিউলির কুমারিত্ব, সতীত্ব । প্রায়শচিত্তের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারলো না মেয়েটা ।

See also  শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

পরান পাখি ছটফটিয়ে মুক্তি নিল ঐ মুক্ত আকাশে । লজ্জা কপাটের রক্ত ধারায় ধুয়ে মুছে গেল শালগ্রাম শিলা ছোঁয়ার পাপ । ভোর বেলা নিতাই মেয়েকে নিতে এল ।সঙ্গে পাঁচশো টাকা দক্ষিণা । ঘরের পিতলের বালতি বেচে দিয়ে এনেছিল সেই পাঁচশো টাকা । চক্রবর্তীর বাড়ির বাইরে চেঁচিয়ে উঠলো নিতাই , ঠাকুরমশাই শিউলি কে নিতে এলুম গো । চক্রবর্তী বাইরে মুখ কাঁচুমাচু করে এসে দাঁড়ালো, বললো সবই তাঁর ইচ্ছা । আমাদের হাতে কি আর কিচু আচে রে । আমি চেষ্টা করেচিলুম মাত্র । কিন্তু নারায়নের রোষে পৃতিবী উল্টে যায় আর ও তো সামান্য মেয়ে মানুষ । নিতাই হকচকিয়ে বলে কে হয়েচে ঠাকুর মশাই ? আমার শিউলি মা কোতায় ?
চক্রবর্তী চোখ কচলাতে কচলাতে কান্নার ভান করে বললো ওরে তোর মেয়ে আর নেই নরায়নের কোপে ও পরলোকে গেচে । নিতাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ।

ওর কান্না শুনে গোটা গাঁয়ের লোক চক্রবর্তীর বাড়িতে হাজির । সবার মুখেই এক কথা কি করে মারা গেল শিউলি; চক্রবর্তী বললো বাপু তবু ভালো যে রোষ টা ওই বিটির ওপর দিয়ে গেচে । তা না হলে তো গাঁ শুদ্দু নোক মরতো গো । নিতাই ওঠ বাপ আর কান্না কাটি করিস নে সবই বিধাতার লিকন রে । যা লাশ টা নিয়ে বাড়ি যা আর যাবার আগে আমার দক্ষিণা টা দিস কিন্তু । যজ্ঞ সফল হয়নিকো তা বলে তো বামুনের দক্ষিণা টা মারতে পারিস না তাতে আরো অমঙ্গল হবে । নিতাই কান্না থামিয়ে বলে হ্যাঁ ঠাকুরমশাই এই নিন আপনার দক্ষিণা । ঘরের বালতি বেচে হাজার ট্যাকা পেয়েছিলুম । এই পাঁচশো এক ট্যাকা আপনার দক্ষিণা আর বাকি টাকায় মেয়ের দেহ টা সৎকৃতি করে দিই ।মা মরা বোবা মেয়ে টাকে কোনদিন কিচ্ছুটি দিতে পারিনিকো । একন একটু ভালো ঘী দিয়ে ওর সারা দেহটাকে মাকিয়ে একখানা তাজা ফুলের মালা দিয়ে ওকে চিতেয় তুলে পায়শচিত্তি করি ঠাকুরমশাই ।

See also  কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়েপড়া ছাত্র প্রতিবাদে সরব হতেই তাঁকে পুলিশ দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হুমকি প্রিন্সিপালের

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি