আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

দেবীর আগমন গজে, গমন নৌকোয় ; মহালয়া থেকে ভাইফোঁটা- এ-বছর কবে কী ?

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

রথীন রায় :- যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দেবী দুর্গা, আবার যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি হলেন দেবী দুর্গা ! মা দুর্গাকে আমরা অনেক নামেই জানি, যেমন – চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, মহামায়া ইত্যাদি ! প্রতি বছর শ্বশুরবাড়ি কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে বাপের বাড়িতে আসেন উমা, সঙ্গে তার চার ছেলেমেয়ে ! আর এই আগমনকাল ঘিরেই শুরু হয় উৎসব ! ইতিমধ্যেই এবারে তার মর্ত্য আগমনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। জেনে নিন সেই নির্ঘণ্ট !

 

-: মহালয়া :-
আশ্বিনের শারদ প্রাতে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর বেজে ওঠা মানেই মহালয়ার পবিত্র সকাল ! বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই পুজো দুয়ারে এসে পড়েছে ! এই বছর ২০২২ সালে মহালয়া পড়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর ! পণ্ডিতরা বলেন, মহালয়া তিথির মাহাত্ম্য আছে ! ওই দিন পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবী পক্ষের সূচনা হয় ! বলা হয়, ওইদিনই মা দুর্গা অসুর বধের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ! এইদিন পিতৃপক্ষের অবসান কালে অনেকে তাদের পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণও করে থাকেন !

 

 

দেবীর আগমন–গমনে বাহন ও তাৎপর্য
মায়ের আগমন মর্ত্যে হয় মোট চারটি বাহনে– পালকি, ঘোড়া, হাতি, আর নৌকো ! আবার ফিরেও যান এই চার বাহনের যে কোনও একটিতে ! প্রত্যেক বছর একই বাহন আসে না ! হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দুর্গার আগমন ও গমনে যে বাহন তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছর পৃথিবীবাসীর কেমন যাবে ! শাস্ত্রমতে, সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন ও দশমীতে গমন হয় ! এই বছর উমা আসছেন গজে চড়ে অর্থাৎ, শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা উপহার দেবেন তিনি ! আর কৈলাসে ফিরবেন নৌকো করে অর্থাৎ শস্য বৃদ্ধি, সঙ্গে জল বৃদ্ধি !

 

-: কোন বাহন কীসের প্রতীক
দোলা– দোলা অর্থাৎ পালকি হল মহামারী বা মড়কের প্রতীক
নৌকো– নৌকো বন্যার প্রতীক
গজ– হাতি হল শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক
ঘোড়া– ঘোড়া হল যুদ্ধবিগ্রহ ও অশান্তির প্রতীক :-
শাস্ত্রে আবার এও বলা হয় যে, যদি কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হয়, তাহলে তা অত্যন্ত অশুভ লক্ষণ !

See also  দুর্গা উৎসবের গাইড ম্যাপ এর উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী

 

 

-: পুজো সময়সূচি :-
এই বছর (২০২২ সালে)
মহাপঞ্চমী– ৩০ সেপ্টেম্বর
মহাষষ্ঠী– ১ অক্টোবর
মহাসপ্তমী– ২ অক্টোবর
মহাষ্টমী– ৩ অক্টোবর
মহানবমী– ৪ অক্টোবর
মহাদশমী– ৫ অক্টোবর

 

 

যে কোনও বাঙালি বাড়িতেই নতুন ক্যালেন্ডার আসা মানে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া দুর্গাপুজোর তারিখের দিকে ! সেই হিসেবে শুরু করতে হবে প্রস্তুতি ! এটা যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব ! সারা বছর শুধু এই ক’টা দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে বহু মানুষ ! তবে উমা আসছেন আর আসার সাথে সাথে তাকে বিদায় জানাতেও প্রস্তুত থাকতে হয় ! কিন্তু তিনি চলে গেলেও তার মেয়ে লক্ষ্মী থেকে যান !

কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হওয়ার ১৫ দিন পর, অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর সোমবার মা দুর্গার আরেক রূপের পুজো হবে তিনি হলেন মা কালী ! বলা হয়, মা কালী হলেন শক্তির দেবী ! তার গায়ের রঙ কৃষ্ণবর্ণ ! মা কালী মা দুর্গার সংহারী রূপ ! তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করেন ! দুষ্টের দমনের উদ্দেশ্যেই মা কালীর আরাধনা করা হয় !

 

 

-: ভাইফোঁটা :-
কৃষ্ণ-সুভদ্রা থেকে শুরু করে যমি ও যমের ভাইফোঁটা নিয়ে অনেক মতবাদ আছে ! কার্তিক মাসের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ দ্বিতীয়ায় ভাই বোনের খুশির উৎসব ভাইফোঁটা পালন করা হয় ! কৃষ্ণ-সুভদ্রা আর যমি-যমের কাহিনি অনুসারে এই ভাইফোঁটার দিন যমুনার কাছে ফোঁটা নেওয়ার জন্য যম তার বাড়িতে আসে ! তখন সকল বোনেরা তাদের ভাইদের মঙ্গল কামনায় যমের দুয়ারে কাঁটা দেয় যাতে যমরাজ তাদের ভাইদের জীবন হরণ করে না নিয়ে যায় ! ভাইফোঁটা নিয়ে একটি প্রচলিত কবিতাও আছে–
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা !
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা !!
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর !
আমার হাতে ফোঁটা নিয়ে আমার ভাই হোক অমর !!

See also  রামনবমীতে ২০০০ কুমারী পূজিত হল আদ্যাপীঠে

ভাইফোঁটার দিন সকালে দিদি বা বোনেরা শিশির ধরে নিয়ে আসে তারপর সে শিশির দিয়ে ভাইয়ের জন্য চন্দন বাটা হয় ! এইভাবেই বছরের পর বছর ধরে দাদা ও ভাইদের মঙ্গল কামনার জন্য এই উৎসব পালিত হয় ! এই বছর ২৭ অক্টোবর ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হবে !!

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি