রথীন রায় :- যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দেবী দুর্গা, আবার যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি হলেন দেবী দুর্গা ! মা দুর্গাকে আমরা অনেক নামেই জানি, যেমন – চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, মহামায়া ইত্যাদি ! প্রতি বছর শ্বশুরবাড়ি কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে বাপের বাড়িতে আসেন উমা, সঙ্গে তার চার ছেলেমেয়ে ! আর এই আগমনকাল ঘিরেই শুরু হয় উৎসব ! ইতিমধ্যেই এবারে তার মর্ত্য আগমনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। জেনে নিন সেই নির্ঘণ্ট !

-: মহালয়া :-
আশ্বিনের শারদ প্রাতে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর বেজে ওঠা মানেই মহালয়ার পবিত্র সকাল ! বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই পুজো দুয়ারে এসে পড়েছে ! এই বছর ২০২২ সালে মহালয়া পড়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর ! পণ্ডিতরা বলেন, মহালয়া তিথির মাহাত্ম্য আছে ! ওই দিন পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবী পক্ষের সূচনা হয় ! বলা হয়, ওইদিনই মা দুর্গা অসুর বধের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ! এইদিন পিতৃপক্ষের অবসান কালে অনেকে তাদের পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণও করে থাকেন !
দেবীর আগমন–গমনে বাহন ও তাৎপর্য
মায়ের আগমন মর্ত্যে হয় মোট চারটি বাহনে– পালকি, ঘোড়া, হাতি, আর নৌকো ! আবার ফিরেও যান এই চার বাহনের যে কোনও একটিতে ! প্রত্যেক বছর একই বাহন আসে না ! হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দুর্গার আগমন ও গমনে যে বাহন তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছর পৃথিবীবাসীর কেমন যাবে ! শাস্ত্রমতে, সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন ও দশমীতে গমন হয় ! এই বছর উমা আসছেন গজে চড়ে অর্থাৎ, শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা উপহার দেবেন তিনি ! আর কৈলাসে ফিরবেন নৌকো করে অর্থাৎ শস্য বৃদ্ধি, সঙ্গে জল বৃদ্ধি !
-: কোন বাহন কীসের প্রতীক
দোলা– দোলা অর্থাৎ পালকি হল মহামারী বা মড়কের প্রতীক
নৌকো– নৌকো বন্যার প্রতীক
গজ– হাতি হল শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক
ঘোড়া– ঘোড়া হল যুদ্ধবিগ্রহ ও অশান্তির প্রতীক :-
শাস্ত্রে আবার এও বলা হয় যে, যদি কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হয়, তাহলে তা অত্যন্ত অশুভ লক্ষণ !
-: পুজো সময়সূচি :-
এই বছর (২০২২ সালে)
মহাপঞ্চমী– ৩০ সেপ্টেম্বর
মহাষষ্ঠী– ১ অক্টোবর
মহাসপ্তমী– ২ অক্টোবর
মহাষ্টমী– ৩ অক্টোবর
মহানবমী– ৪ অক্টোবর
মহাদশমী– ৫ অক্টোবর
যে কোনও বাঙালি বাড়িতেই নতুন ক্যালেন্ডার আসা মানে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া দুর্গাপুজোর তারিখের দিকে ! সেই হিসেবে শুরু করতে হবে প্রস্তুতি ! এটা যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব ! সারা বছর শুধু এই ক’টা দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে বহু মানুষ ! তবে উমা আসছেন আর আসার সাথে সাথে তাকে বিদায় জানাতেও প্রস্তুত থাকতে হয় ! কিন্তু তিনি চলে গেলেও তার মেয়ে লক্ষ্মী থেকে যান !
কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হওয়ার ১৫ দিন পর, অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর সোমবার মা দুর্গার আরেক রূপের পুজো হবে তিনি হলেন মা কালী ! বলা হয়, মা কালী হলেন শক্তির দেবী ! তার গায়ের রঙ কৃষ্ণবর্ণ ! মা কালী মা দুর্গার সংহারী রূপ ! তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করেন ! দুষ্টের দমনের উদ্দেশ্যেই মা কালীর আরাধনা করা হয় !
-: ভাইফোঁটা :-
কৃষ্ণ-সুভদ্রা থেকে শুরু করে যমি ও যমের ভাইফোঁটা নিয়ে অনেক মতবাদ আছে ! কার্তিক মাসের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ দ্বিতীয়ায় ভাই বোনের খুশির উৎসব ভাইফোঁটা পালন করা হয় ! কৃষ্ণ-সুভদ্রা আর যমি-যমের কাহিনি অনুসারে এই ভাইফোঁটার দিন যমুনার কাছে ফোঁটা নেওয়ার জন্য যম তার বাড়িতে আসে ! তখন সকল বোনেরা তাদের ভাইদের মঙ্গল কামনায় যমের দুয়ারে কাঁটা দেয় যাতে যমরাজ তাদের ভাইদের জীবন হরণ করে না নিয়ে যায় ! ভাইফোঁটা নিয়ে একটি প্রচলিত কবিতাও আছে–
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা !
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা !!
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর !
আমার হাতে ফোঁটা নিয়ে আমার ভাই হোক অমর !!
ভাইফোঁটার দিন সকালে দিদি বা বোনেরা শিশির ধরে নিয়ে আসে তারপর সে শিশির দিয়ে ভাইয়ের জন্য চন্দন বাটা হয় ! এইভাবেই বছরের পর বছর ধরে দাদা ও ভাইদের মঙ্গল কামনার জন্য এই উৎসব পালিত হয় ! এই বছর ২৭ অক্টোবর ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হবে !!