ইন্দাসের দিঘলগ্রামের প্রবীণা নারী প্রমাণ করলেন, প্রতিভা ও সৃজনশীলতার কোনো বয়স নেই কথায় আছে — “যে রাধে, সে চুলও বাঁধে।” আর সত্যিই যেন সেই কথাটিকেই জীবন্ত করে তুলেছেন বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার দিঘলগ্রামের ৭০ বছর বয়সী সুচিত্রা ঘোষ। সামান্য কাঁদামাটি, একটি কাস্তে ও একটি পেরেককে সঙ্গী করে তিনি তৈরি করেছেন এমন এক বিস্ময় — মাটির তৈরি শঙ্খ, যা আজ সারা এলাকায় কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
সচরাচর শঙ্খ মানেই আমরা ভাবি সমুদ্রের তলদেশ থেকে পাওয়া এক বিশেষ সামুদ্রিক খোলস। সেই শঙ্খই বাজে পুজোয়, মন্ত্রোচ্চারণে, পরিবারের মঙ্গলে। কিন্তু সুচিত্রা দেবী দেখিয়ে দিলেন — শিল্পের কোনো সীমানা নেই। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় মাটির দলা পরিণত হচ্ছে একেবারে বাস্তব শঙ্খে, যার সৌন্দর্যে ও নিখুঁত গঠনে তাক লেগে যাচ্ছে সকলের।

পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের আনগ্রামে জন্ম সুচিত্রা ঘোষের। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন নানা প্রতিভায় ভরপুর — গান, পাঠদান, হাতের কাজ, সবেতেই পারদর্শী। সেহারা বাজার চন্দ্র কুমার ইনস্টিটিউশন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর সংসার জীবনে প্রবেশ। স্বামী, সন্তান, সংসারের ভার সব কিছুই একা হাতে সামলেছেন। বছর দুই আগে স্বামীর মৃত্যু তাঁর জীবনে এক গভীর শূন্যতা এনে দেয়। কিন্তু সেই শূন্যতাকে দুঃখে নয়, সৃজনশীলতায় ভরিয়ে তুললেন তিনি।
আজ সুচিত্রা দেবীর তৈরি মাটির শঙ্খ শুধুমাত্র তাঁর গ্রামেই নয়, আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য জেলায়ও। মানুষ অবাক হয়ে দেখছেন — এমন নিখুঁত শঙ্খ কীভাবে কেবল মাটি দিয়ে তৈরি সম্ভব!

পরিবারের সবাই আজ তাঁর অনুপ্রেরণায় গর্বিত। তাঁর হাতে গড়া প্রতিটি শঙ্খ যেন এক নতুন আশার প্রতীক — বয়স কোনো বাধা নয়, ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে অমর করে রাখে।
রাজ্য সরকার যেমন হস্তশিল্প ও স্বনির্ভরতার উপর জোর দিচ্ছে, ঠিক তেমনই সুচিত্রা ঘোষের এই সৃজনশীলতা হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত — যে কোনো বয়সেই যদি মন থেকে চাওয়া যায়, নতুন আলোর প্রদীপ জ্বালানো যায় জীবনভর।
সুচিত্রা ঘোষ শুধু মাটির শঙ্খই তৈরি করেননি, তিনি যেন নতুন প্রজন্মের মনে জ্বেলে দিয়েছেন সাহস, আত্মবিশ্বাস ও নবপ্রেরণার এক প্রদীপ।
বাঁকুড়া থেকে কৃষ্ণ সাহার রিপোর্ট কৃষকসেতু নিউজ বাংলা।








