আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

লাগাতার বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি ভেঙে পড়ে রাজস্থানে মৃত্যু বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁর মেয়ের – জখম আরো বহু পরিযায়ী শ্রমীক

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৬ সেপ্টেম্বর

উপার্জনের দাগিতে রাজস্থানের জয়পুরে কাজে গিয়ে ভয়ংকর পরিণতির শিকার হলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা।টানা বৃষ্টিতে শুক্রবার রাতে সেখানে ভেঙে পড়া বাড়ির নিচে চাপা পড়ে প্রভাত বাগদি(৩৫) ও তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে পিউ বাগদি-র মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজস্থানের হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী সুমিত্রা বগদি।একই দুর্ঘটনায় জখম হয়ে আরো চারজন সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মৃত ও জখমরা সকলেই পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা।এই ঘটনার খবর শনিবার সকালে পূর্বস্থলীর বাড়িতে পৌছাতেই শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন মৃতদের পরিজনরা।শোকাচ্ছন্ন গোট গ্রাম ।

পরিবার পরিজন ও স্থানীয়দের কথায় ছানা গিয়েছে,প্রভাত বাগদি দের পরিবার আর্থিক ভাবে দুর্বল। চাষবাস কর জীবিকা নির্বাহ করার মতো এক ছটাক জমিও তাঁদের নেই।এমন অবস্থায়
নিজ ভূমে কর্মকরে উপার্জনের পথ খুঁজে না পেয়ে
দু’দশকেরও বেশি সময় আগে বাগদি পরিবারের সকলে ভিনরাজ্য রাজস্থানে পাড়ি দেন।সেখনকার
জয়পুরের সুভাষচকে তাঁরা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

জয়পুরে থেকেই প্রভাত এবং তাঁর দুই দাদা সুদর্শন বাগদি ও রবীন্দ্রনাথ বাগদি সোনা-রুপোর অলংকার তৈরির কাজ করতেন। দুই দাদার স্ত্রীরা পূর্বস্থলী গ্রামের বাড়িতে থাকলেও প্রভাত তাঁর স্ত্রী ও একরত্তি মেয়েকে নিয়ে জয়পুরে পুরানো বহুতল বাড়িতেই থাকতেন।একই বহুতলে পূর্বস্থলী এলাকার আরো বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকও থাকতেন।

মৃতের পরিবার সদস্যদের কথায় জনা গিয়েছে,
ওই বহুতলে সতেরো জন ভাড়া থাকতেন। বিগত কয়েকদিন যাবৎ লাগাতার বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে জয়পুরে । শুক্রবার গভীর রাতে বৃষ্টিপাতের মধ্যেই বিকট শব্দে ওই বিল্ডিংটি ভেঙে পড়ে ।ভেঙে পড়া সেই বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ভাড়াটিয়ারা চাপা পড়ে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে পুলিশ উদ্ধার কাজ শুরু হয়।রাতভর উদ্ধার কাজ চালিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে একে একে সবাইকে বের করা হয়
।তাদের সবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।সেখানে চিকিৎসক প্রভাত ও তার মেয়েকে মৃত বলে ঘোষণা করেধ। প্রভাতের স্ত্রী সুমিত্রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখনও জয়পুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন।

See also  কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে পশ্চিমবঙ্গ নজির গড়ল

মৃতের দুই বউদি পূর্ণিমা ও অনিমা বাগদীরা বলেন, “ ২০০৪ সাল থেকে তাঁদের পরিবারের পুরুষরা
রাজস্থানের জয়পুরে গিয়ে সোনারূপোর কাজে যুক্ত হন। আমাদের স্বামীরা ওখানে থাকলে পাশে থাকতেন। লাগাতার বৃষ্টির কারণে ভাড়া বাড়ি ভেঙে পড়ায় আমাদের দেওর ও তাঁর মেয়ের প্রাণ খোয়া গিয়েছে।

জা এর অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।এছড়াও পরিজনদের মধ্যে সোনা বাগদী, ঋষি বাগদী, সুদেব বাগদী, সুপর্ণা বাগদী জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ছেলে ও নাতনির অকাল মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন গ্রামে থাকা মৃতার বিধবা মা এলোকেশী দেবী।এদিন তিনি ঘন ঘন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।

কাজের সন্ধানে বাংলার শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে যেতে হওয়া নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ।
যদিও পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ’একশো দিনের কাজের উপর নির্ভরশীল ছিল গ্রামের বহু গরীব পরিবার।কিন্তু বিজেপি সরকার বাংলায় একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তাদের বাইরে কাজে যেতে হচ্ছে’।

এর পাল্টা এলাকার বিজেপি নেতা প্রহ্লাদ ঘোষ বলেন, “বাংলায় কাজ না থাকার জন্য বাংলার শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে। এর জন্য বাংলার সরকার দায়ী“।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি