আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

জমিতে উৎপাদিত ধান কিষাণ মাণ্ডিতে বিক্রি করতে যাওয়া চাষিদের ফেরালেই এবার চাষিরা এফআইআর করবে-জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ২৭ জুন:- কিষাণ মাণ্ডিতে ধান বিক্রী করতে যাওয়া চাষিদের ফেরানো বন্ধে কড়া নিদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।রাজ্যের শস্য গোলা বলে পরিচিত বর্ধমানে সরকারী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিলেন,কিষাণ মাণ্ডিতে ধান বিক্রি করতে যাওয়া চাষিদের ফেরানো হলেই চাষিরা থানায় এফআইআর করবেন।বিডিও কেও অভিযোগ জানাবেন । চাষিরা অভিযোগ জানানোর সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিডিও এবং ওসিকে এদিন নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।এই ব্যাপারে যিনি দায়িত্ব নেবেন না তাঁর ক্ষমতায় থাকারও কোন অধিকার নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন ।

 

 

জমিতে উৎপাদিত ধান চাষিরা কিষাণ মাণ্ডিতে বিক্রী করতে গেলে ওজনটাও যাতে ঠিক মতো নেওয়া হয় তা দেখার ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিকে সজাগ ও সতর্ক থাকার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।পাশাপাশি তিনি কৃষক মাণ্ডি ও এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং গুলিকে টিকমতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার কথা বলেন।এগ্রো মার্কেটিং এ থেকে যদি কেউ ঠিকমতো কাজ না করে তার বিরুদ্ধেও কঠোর অ্যাকশান নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এদিন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিন।মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়েছেন শস্যগোলার কৃষক মহল ।

 

 

বছর ঘুরলেই এই রাজ্যে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন ।তার আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি বিভাগ সোমবার কৃষি প্রধান বর্ধমানের নবাবহাটের গোদার মাঠে ’নতুন কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প সহ অন্যান সরকারী সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী,মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ,মলয় ঘটক,শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ জেলার সব বিধায়ক ও প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে চাষিরা ওই সভায় যোগ দেন ।কৃষি প্রধান জেলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃষক স্বার্থে কল্পতরু রুপেই দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে ।এদিন তিনি খরিফ মরশুমের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্পে রাজ্যের ৮৯ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট ২ হাজার৩৮৫ কোটি সাহায্য প্রদান করেন ।

See also  শীতের মরসুমে কম খরচে গাঁদা ফুলের চাষ করে লাভের মুখ দেখেন চাষীরা

 

 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,বর্ধমান থেকে বোতাম টিপলাম আর সাথে সাথে রাজ্যের ৭৯ লক্ষ কৃষকের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পৌছে গেল।কৃষকদের স্বার্থে রাজ্য সরকার ১১ বছরে আরো কিকি কাজ করেছে সেই খতিয়ানও এদিন মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত চাষিদের কাছে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই বলেন , আমি বর্ধমান জেলাকে স্যালুট জানাই । বর্ধমান জেলা আমাদের খাইয়ে পরিয়ে রাখে । আমাদের অন্নদাতা মা । আমাদের অন্নদাত্রী মা ।কৃষকরা আমাদের গর্ব ,আমাদের সম্পদ । জেলার চাষিদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , আপানারা যা উৎপাদন করেন তাই খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি।সেই কারণে মা মাটি মানুষের সরকারের
কাছে আপনাদের গুরুত্ব অপরিসীম। যে মাটিকে কেন্দ্রকরে আমি ২০১৩ সালে বর্ধমানে ’মাটি তীর্থ’ করে দিয়েছিলাম। সেই প্রোগ্রামকে ২০১৫ সালে ইউনাইডেট নেশন সারা পৃথিবীতে কায়েম করে ছিলেন । কৃষকদের মঙ্গল সাধনে বর্ধমান জেলায় আমরা মাটি উৎসব করি ।
’কৃষক রত্ন’ প্রাইজ দি।

 

 

মুখ্যমন্ত্রী জানান , এদিন রাজ্যের ৭৯ লক্ষ কৃষককে ’ নতুন কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে ২৩৭৫ কোটি টাকা দেওয়া হল।যখন আমরা প্রথম শুরু করেছিলাম তখন এক একর জমি থাকা কৃষকদের ৬ হাজার টাকা দিতাম। আর ২ হজার টাকা দিতাম খেত মজুর দের । বিধান সভা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আমরা জিতলে চাষিদের টাকাটা ১০ হাজার করবো, আর খেত মজুর দের টাকাটা ডবোল অর্থাৎ ৪ হাজার করবো । সেই প্রতিশ্রুতি মতো এই বছরে আমরা চাষিদের টাকাটা ১০হাজার করেই চালু করলাম । এটা একটা দৃষ্টান্ত স্বরুপ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,কৃষকদের জমি যাাতে জোরকরে কেড়ে নেওয়া না হয় তার জন্য তিনি ২৬ দিন অনশন করেছেন । কেন্দ্রের সকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,কেন্দ্রের সরকারে বিজেপির কৃষক বিরোধী যে মনোভাব তার বিরুদ্ধে দেশে যে লড়াই হয়েছে ,তাতে আমি সর্বপ্রথম তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি ।

See also  ভোটের আগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুট চালাচ্ছে কেন্দ্র সরকার বললেন স্বপন দেবনাথ

 

 

আমরাই, ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী কোন কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লক্ষ করে দি। এখনও পর্যন্ত এই খাতে ৫১ হাজার কৃষক পরিবারকে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মখ্যমন্ত্রী বলেন , আমি গর্ব করে বলতে পারি আমাদের কৃষকদের আয় তিন গুনের বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের কৃষজাত ফসলের অনেক চাহিদা আছে ডাল ,তৈলবীজ ,ভুট্টা,সুগন্ধী সরু চাল ,পেঁয়াজ এর দাম ভালো পাওয়া যায় । আমরা এগুলোর চাষে উপর জোর দিয়েছি। আমাদের রাজ্যে অল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৭ গুন । ডাল শস্যের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুন । তৈলবীজের উৎপাদন বেড়েছে দেড় গুন। ১১ বছরে মোট খাদ্য শস্যের উৎপাদন বেড়েছে ৫৭ লক্ষ টন । এই নজিরবিহীন উন্নতির জন্য আমারা কৃষকদের কাছে কৃতজ্ঞ।এরফলে একদিনে কৃষকরা যেমন দাম পাচ্ছেন , তেমনই আমার কৃষকদের কাছ থেকে ধাান , চাল প্রকিয়োর করছি।আমার কৃষক জমিতে খাজনা, মিটেশন মুকুব করেছি।

 

 

শস্য বীবার টাকা সম্পূর্ণ আমরা দিচ্ছি । এরজন্য বছরে সাতশো টাকা খরচ হচ্ছে। ২০২২ রবি মরশুমে ৬৬ লক্ষের বেশী কৃষক এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১১ বছরে যত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়েছে তার জন্য ৬৬ লক্ষ কৃষক পরিবারকে নতুন করে চাষ করার জন্য ৩ হাজার ৯ শো কোটিরও বেশী টাকা আমরা আর্থিক সহায়তা করেছি । উত্তর ২৪ পরগনা,দক্ষিণ ২৪ পরগনা , মেদনাপুরে সমুদ্রের নোনা জলে ধান নষ্ট হয়ে যায় । সেই কৃষকদের সাহায্য করার জন্য আমরা ’স্বর্ণ ধান’ তৈরি করেছি । এই স্বর্ণ ধান আজকে সেখানকার চাষিরা ভালো ভাবে তৈরি করছে ।
মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন ,ভারত বর্ষের মধ্যে একমাত্র এই রাজ্যে এগ্রি মেশিনারি ওয়ার্কশপ কাম ট্রেনিং সেন্টার গতবছর চালু করেছি । এর নাম হচ্ছে মাটি গাঁথা । আগামী দিনে কৃষক যন্ত্র মেরামতি ,রক্ষণাবেক্ষণ তাকে (কৃষকদের ) স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবে । এছাড়াও ৬০ হাজারের বেশী ডিপ ইরিগেশন তৈরি হয়েছে। অনুর্বর জমিকে উর্বর করার জন্য ’মাটি সৃষ্ট’ প্রজেক্ট করেছি।

See also  সিভিক ভলান্টিয়ারদের (ভিলেজ) ‘দৈনিক মজুরি’ বৃদ্ধি করল মমতার সরকার।

 

 

ধান উৎপাদনে রাজ্যের সাফল্যের কথাও এদিন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি জানান ,প্রতিবছর রাজ্যে ২৫৩ লক্ষ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয় । কেন্দ্রীর সরকার ১লক্ষ মেট্রিকটন ধানও এখান থেকে প্রকিয়র করেনি । অন্য অন্য রাজ্য যে খানে আমাদের থেকে ধান উৎপাদন কম হয় সেখান থেকে ধান প্রকিয়োর করে । ২৫৩ লক্ষ মেট্রকটন যে ধান আমাদের উৎপাদন হয় সেই চাল কৃষকদের কাছ থেকে কিনে আমরা ফ্রিতে রেশন দি ।বর্ধমানের পাশে বীরভূমের জেলার দেউচা পাঁচামিতে পৃথিবীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম যে কোল কমপ্লেস তৈরি হবে সেখানে ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে । সেকানে ১ লক্ষ ছেলে মেয়ের চাকরি হবে । বর্ধমানের ছেলে মেয়েরাও সূযোগ পাবেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌছে দেওয়ার কাছ শেষ করে ফেলা হবে বলেও এদিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি