বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও কোকিলা কন্ঠের অধিকারী গায়িকা লতা মঙ্গেশকর প্রয়াত হলেন রবিবার সকালে। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। প্রয়াণকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। গত ১১ জানুয়ারি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় শিল্পীকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রথম থেকেই তাঁকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল।কিন্তু শনিবার আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। অবশেষে রবিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে গেলেন শিল্পী।
দুর্গাপুরের ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের উজ্জ্বল উপস্থিতি। আশির দশকে দুর্গাপুরের এ-জোন স্থিত হোস্টেল অ্যাথলেটিক ক্লাব ও হিজ মাস্টার্স ভয়েস কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে এক বিরাট রাত্রিকালীন জলসার আয়োজন হয়েছিল। ওই জলসার মুখ্য গায়িকা হিসেবে তখন দুর্গাপুরে এসেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। ওই অনুষ্ঠানে শুধু তিনিই ছিলেন না, ছিলেন এস পি বালসুব্রহ্মণ্যম, মহেন্দ্র কাপুর, জনি ওয়াকারের মতন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা। ওই রাত্রিকালীন জলসার সর্বনিম্ন টিকিটের মূল্য ছিল তখনকার সময়ে ২০০ টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক আসনবিশিষ্ট ওই জলসাতে অংশগ্রহণ করতে গোটা রাজ্য থেকে এসেছিলেন সংগীত অনুরাগীরা। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষও সেদিন লতা মঙ্গেশকরের কোকিল কন্ঠের গান শুনে মাতোয়ারা হয়েছিলেন।
এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক মনোজ সিংহ
এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক মনোজ সিংহ তার পরিবারের সাথে ছোট বয়সে হাজির হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এই সংগীত অনুষ্ঠানে। সেদিনকার সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনোজ সিংহ জানান, “আশির দশকে যখন মাননীয়া সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর দুর্গাপুরে এসেছিলেন তখন তাকে আমার ওই ছোট্ট বয়সে এমন ভাবে চেনা ছিল না। কিন্তু সংগীত অনুরাগী পরিবারের এক সদস্য হওয়ায় আমার পরিবারের মুখে বহুবার শুনেছি তাঁর কোকিলা কন্ঠের কথা। আমাদের পরিবার তখন আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল না, তাই ২০০ টাকা টিকিট কেটে পরিবারের সবার ওই জলসায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আমার পিতা মাতা আমাকে কোলে করে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন।
আমার স্মৃতি থেকে যতটুকু মনে পড়ে স্টেজের উপরে একটি কাঁচের বাক্সের মধ্যে গান গাইছিলেন লতা মঙ্গেশকরজি। বেশ কয়েকটি তখনকার দিনের বিখ্যাত হিন্দি ছায়াছবির গান গেয়ে মাতিয়ে তুলেছিলেন তখনকার সেই রাত্রিকালীন জলসা। সব গানের কথা আমার মনে না থাকলেও একটি গান আজও আমার কানে বাজে যা সেদিনের জলসায় তিনি গিয়েছিলেন। গানটি ছিল গীত সিনেমার ‘আজা তুজকো পুকারে মেরে গীত’। ওই জলসা অনুষ্ঠানের জন্য যে জায়গাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তার চারিদিকে প্রায় ৫০০ মিটার অবধি শুধুমাত্র সুরক্ষা প্রদানকারীর পুলিশ প্রশাসনের লোকজনের ভিড়ে থিক থিক করছিল। আমার স্পষ্ট মনে রয়েছে বেশ কয়েক জায়গায় টিকিট পরীক্ষা করার পর মূল প্যান্ডেলে আমরা প্রবেশ করতে পেরেছিলাম।”
যতদিন হিন্দি চলচ্চিত্র ও সিনেমার অস্তিত্ব থাকবে ততদিন লতা মঙ্গেশকরের কোকিলা কন্ঠে গাওয়া গানের অস্তিত্ব থেকে যাবে। ভারতের সুরের সম্রাজ্ঞী না ফেরার দেশে চলে গেলেও তাঁর গান ও সুরের মুর্ছনার মধ্যে দিয়ে তিনি চিরকাল আপামর সঙ্গীত প্রেমীর হৃদয়ে বিরাজ করবেন।