আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

সারের কালোবাজারি চলায় বিপাকে শস্যগোলার আলু চাষিরা – নড়ে চড়ে বসলো কৃষি দফতর

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- আলু চাষ শুর হতেই চরমে উঠেছে রাসায়নিক সারের কালেবাজারি।তার কারণে চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছেন রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার আলু চাষিরা।সারের কালোবাজারি শুরু হওয়ায় অসন্তোষ তীব্র হয়েছে জেলার চাষি মহলে। তাঁরা চাইছেন , সারের কালোবাজারির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক সরকার ও কৃষি দফতর।চাষিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকেই কালোবাজারি বন্ধে অভিযান শুরু করেদিল কৃষি দফতর ।

পূর্ব বর্ধমান প্রধান অর্থকরী ফসল ধান ও আলু ।জেলায় গড়ে ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে
আলুচাষ হয়ে থাকে ।অন্য বছরের মত এই বছরও জমির আমন ধান গাছ কাটার কাজ শেষ হতেই জেলার সর্বত্রই পুরো দমে শুরু হয়ে গিয়েছে আলু চাষের প্রস্তুতি আর আলু চাষ করতে নেমেই মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে শস্যগোলার আলু চাষিদের । কারণ বাজারে যেমন চড়া আলু বীজের দাম তেমনই চলছে আলু চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের কালোবাজারী ।

সার কিনতে গিয়েই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে চাষিদের ।এরপর চাষের বাকি খরচ কি ভাবে যোগাড় হবে সেটা ভেবেই এখন দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন জেলার মেমারি , জামালপুর ,রায়না সহ বিভিন্ন ব্লকের চাষিরা । বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রশাসন ও কৃষি দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন শস্যগোলার আলু চাষিরা ।

প্রশাসনের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জেলার মেমারি ১ ব্লকের নিশিরাগড় নিবাসী কৃষক বন্ধু বিকাশ সিনহা জানিয়েছেন, সার ব্যবসায়ীরা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম চাষিদের কাছ থেকে নিচ্ছে ।সারের প্যাকেটে লেখা
মূল্যের অতিরিক্ত দাম চাষিদের কাছ থেকে আদায় করছে ব্যবসায়ীরা । নিশিরাগড়ের আলু চাষি ধীরেণ মাণ্ডি বলেন , আলু চাষের জন্য মূলত ’ইউরিয়া’ ও ’এন- পি -কে ১০ঃ২৬ঃ২৬’ রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় ।

সেই সার কেনার জন্য তিনি তাঁদের এলাকার সার ব্যবসায়ীর কাছে যান । ওই সার ব্যবসায়ী তাঁকে জানান ,এক বস্তা ‘এন-পি-কে ১০ঃ২৬ঃ ২৬‘ “পরস“ সারের দাম ১৭ শো টাকা । ১ টাকা কমে দেওয়া যাবেনা বলেও ওই ব্যবসায়ী তাঁকে জানিয়ে দেন । ১৭ শো বস্তা দরেই ’এন-পি-কে ১০ঃ২৬ঃ২৬’ সার কিনতে তিনি বাধ্য হন । চড়া দামে সার বিক্রী করলেও ব্যবসায়ী তাঁকে কোন ’ক্যশমেমো’ দিতে রাজি হন না ।সারের বস্তা হাতে পাওয়ার পর তিনি দেখেন বস্তায় সারের মূল্য লেখা রয়েছে ১৪৭০ টাকা।

See also  মায়ের আত্মঘাতী হবার ঘটনায় গ্রেপ্তার নেশাগ্রস্ত ছেলে

এও জানতে পারেন,চাষি স্বার্থে বস্তা প্রতি ’এন-পি- কে ১০ঃ২৬ঃ২৬’ সারে কেন্দ্রীয় সরকার ৯১৪ টাকা ৬৫ পয়সা ভর্তুকি দিয়েছে ।সারের কালোবাজারির বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন বলে ধীরেনবাবু জানিয়েছেন।
একই ভাবে জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম
পঞ্চায়েত এলাকার চাষি সজল সিং ও পঙ্কজ সিং জানান ,আলু চাষের রাসায়নিক সারের কৃত্রিম ঘটতি তৈরি করা হয়েছে । তার সূযোগ নিয়ে ব্যবসাদাররা নেজ্য মূল্যের থেকেই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশী দামে সার বিক্রী করছেন । সজল সিং এও বলেন ,সারের দাম বেশী হওয়ায় চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখেই শুধু পড়ছে না , চাষও পিছিয়ে যাচ্ছে।

তার কারণে আলুর ফলন মার খাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে’ । রায়না বিধানসভার গোতান অঞ্চলের বাতাসপুর গ্রামের আলু চাষি তুষার মণ্ডল বলেন , “তাঁদের গোতান আঞ্চলে আলু চাষের রাসায়নিক সার-ই মিলছে না ।অন্য জায়গা থেকে ‘১০ঃ২৬ঃ২৬ এন-পি-কে’ সার ১৭ শোর বেশী দামে কিনে আনতে হচ্ছে।এত খরচ করে আলু চাষ করার পর চাষিরা যদি অলুর মূল্য যথাযথ না পায় তবে চাষিরা সর্বসান্ত হয়েযাবে বলে তুষার মণ্ডল দাবী করেছেন“। কৃষক বন্ধু বিকাশ সিনহা বলেন ,“সব সময়েই কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই চাষি স্বার্থে সারের কালোবাজারির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা নিক, সেটাই চাইছেন জেলার চাষিরা“।

আলু চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের দাম নেজ্যমূলের অতিরিক্ত নেওয়ার সাফাই দিয়েছেন জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের ব্যবসায়ী মধুসূদন পণ্ডিত। তিনি বলেন , “হোলসেলাররা
ঠিকমতো সার সাপ্লাই দিচ্ছে না । আবার যেটুকু সার দিচ্ছে তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস নিতে বাধ্য করছে ,যেগুলি চাষিদের কোন কাজেই লাগেনা ।

হোলসেলারের গোডাউন থেকে সার নিয়ে যাওয়ার ট্রান্সপোর্ট
খরচও মিলছে না।এই সব অ্যাডজাস্ট করে সার বিক্রী করতে গিয়ে গ্রামীণ এলাকার কিছু কিছু সার ব্যবসায়ী বেশী দাম নিতে বাধ্য হচ্ছেন“ ।বরুণ কুমার সাউ নামে জামালপুরের অপর এক সার ব্যবসায়ী বলেন , “পর্যাপ্ত সারের সাপ্লাই নেই ।তারই সূযোগ নিচ্ছে সারের হোলসেলার ও ডিস্ট্রিবিউটাররা । আর কিছু দাম বেশী নেওয়ার জন্য মুখ পড়ছে ছোট সার ব্যবসায়ীদের’ ।

See also  খন্ডঘোষে দ্বিতীয় ধাপে শুরু হল দুয়ারে সরকার ক্যাম্প

এদিকে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চাষের রাসায়নিক সারের কালোবাজারি অভিযোগ পেয়েই নড়ে চড়ে বসেছে কৃষিদফতর । জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন , “প্রশাসন ও কৃষি দফতরের টিম মঙ্গলবার থেকে জেলা প্রতিটি ব্লক ও মহকুমা এলাকায় প্রত্যেকটি ডিলারের কাছে পৌছে গিয়ে সার বিক্রি সংক্রান্ত ক্যাশমেমো যাচাই করা শুরু করে দিয়েছে । তাঁরা সারের স্টকও খতিয়ে দেখছেন। এই অভিযান এখন লাগাতার চলবে । কেউ কোথাও সারের দাম বেশী নিলে চাষিরা কৃষি দফতরে যোগাযোগ করুন। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উপ কৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি