কাটোয়ার মানুষের আজও ভরসা সেই প্রাচীন নিমগাছ। নিমগাছই “ঝুপো-মা”।নিমগাছই এখানে জাগ্রত ঝুপোকালী নামে পরিচিত।মূর্তি নয়,অন্য কোনও রূপেও নয় ।গাছরুপী এই দেবীই “ঝুপো-মা “নামেই প্রসিদ্ধ কাটোয়ার অজয় নদের তীরে লাগোয়া এলাকায়।
কথিত আছে,ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা এই নির্জন স্থানে বর্গীরা আত্মগোপন করে থাকত।এখান থেকেই অজয় ও ভাগীরথী সঙ্গমস্থলে বাণিজ্যতরীতে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালাত জলদস্যুরা।এদের আরাধ্য দেবী ছিল এই নিমগাছ। দস্যুবৃত্তির পূর্বে দেবীকে স্মরণ করে লুটপাট করতে যেত তারা ।তবে সেসব এখন অতীত।
পরে জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় জনবসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে নিমগাছ সংলগ্ন ওই বেদিটি দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা । ধূপধুনো দিয়ে পুজো করার রেওয়াজও শুরু হয় তখন থেকেই । জায়গাটির পরিচর্যাও শুরু হয় । বাড়তে থাকে ভক্তসংখ্যাও ।প্রতি অমাবস্যা তিথিতে ও নানা তিথিতেই দুর-দুরান্ত থেকে ভক্তরা আসতে থাকে এখানে।সুষ্ঠুভাবে যাতে ভক্তরা পুজো দিতে পারে তার জন্য ২০১৩সালে ঝুপো-মা পুজো কমিটি গঠিত হয়েছে। বারোমাসই ঠাকুরের সেবা হয় । তার জন্য দুজন পুরোহিত রয়েছে। ভক্তদের দানের সোনা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রয়েছে।
কালীপুজোর সময় আশেপাশের জেলা থেকেও প্রচুর দর্শানাথী ও ভক্তদের আগমন ঘটে।দর্শানাথীদের সুবিধার কথা ভেবেই প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র,পুলিশ বুথ,স্বেচ্ছাসেবক, ব্যারিকেড, আলো,জল ও প্রসাদ বিতরণীর কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়। সব জায়গায় যখন প্রতিমা বিসর্জন হয় তখন এখানে প্রতিমার পরিবর্তে নিমগাছের ছবি দিয়ে মানুষ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে এই পুজোর সমাপ্তি হয় যা আজও কাটোয়ার মানুষদের কাছে এক অভিনবত্ব ও নতুনত্ব।