রোজগারের আশায় সৌদি আরবে কাজে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এই রাজ্যের বেশ কয়েকজন শ্রমীক । তাদের মধ্যে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার তিন জন ।তারা হলেন
গিয়াসউদ্দিন সেখ ,হিল্লাল সেখ ও নূরুল ইসলাম । গিয়াসউদ্দিনের বাড়ি পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ায় । হিল্লাল পূর্ব ন-পাড়া এবং নুরুল মন্তেশ্বরের রুইগড়িয়ার বাসিন্দা । এজেন্টের মাধ্যমে সৌদি আরবের জেড্ডায় কাজে গিয়ে সন্তানরা বিপাকে পড়ায় চরম উৎকন্ঠায় এখন দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের পরিবার সদস্যরা ।এরই মধ্যে কাশ্মীরে কাজেযাওয়া মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিককে নৃশংস ভাবে হত্যা করার ঘটনা সামনে এসেছে । এর পরথেকে উদবেগ উৎকন্ঠা বহুগুন বেড়েগিয়েছে আরবে কাজে গিয়ে আটকে পড়া পূর্ব বর্ধমানের শ্রমিকদের পরিবারে ।
বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রক ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের নজরে এনেছে ন্যাশানাল অ্যান্টি ট্র্যাফিকিং কমিটি । আরব থেকে সন্তানদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে মুখমন্ত্রীর মুকাপেক্ষী হয়ে রয়েছে তাঁদের বাবা মায়েরা ।
সৌদি আরবের জেড্ডায় আটকে পড়াদের মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের তিন শ্রমিক সহ বাংলার মোট ২০ জন শ্রমিক রয়েছে । এছাড়াও মুম্বাইয়ের থানের এক বাসিন্দা রয়েছেন । আরবে কাজে যাওয়া এরা সকলেই সোনার কারিগর ।প্রায় দু-বছর আগে মুম্বাইয়ের এক এজেন্টের মাধ্যমে এই সোনার কারিগররা জেড্ডার একটি অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগদেয় । এই কারিগররা সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে তাঁদের দুরাবস্থার কথা শুনিয়েছে । তাথেকে জানাগেছে , “সেখানকার বিমানবন্দরে নামার পর সংস্থার লোকজন তাঁদের পাসপোর্ট ভিসা নিজেদের কব্জায় নিয়েনেয়। প্রথম দিকে সংস্থাটি শ্রমিকদের বেতন ও আনুসঙ্গিক খরচ সবই সঠিক সময়ে দিয়েছিল ।কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হবার কয়েকমাস আগে থেকে সংস্থার লোকজন টিকঠাক পারিশ্রমিক দেবার ব্যাপারে টালবাহানা করতে শুরু করে ।
পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাসের পর আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের সেখানে থাকা করায় সংস্থার কর্তৃপক্ষ । তারই মধ্যে সকল শ্রমীকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সবাই বিপাকে পড়েন । এই পরিস্থিতিতে ২১ জন শ্রমিক এখন কার্যত জেড্ডায় গৃহবন্দি হয়ে থাকছেন । তাঁদের খাবার দাবারও ঠিকঠাক জুটছে না । ভারতে ফেরার ব্যাবস্থা করেদেবার আর্জি সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে রেখেছে জেড্ডায় আটকে পড়া বাংলার শ্রমিকরা ।
মন্তেশ্বরের রুইগড়িয়া গ্রামে নূরুল ইসলামের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা ও মা । এদিন
নূরুলের বাবা নূর আলম ও মা চান্দেহারা বিবি বলেন,‘সংসারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনাতে পারবে এই ভেবে ছেলে এজেন্ট মাধ্যমে বছর দুয়েক আগে সৌদি আরবের জেড্ডায় অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগদেয় । মালিক প্রথমদিকে ঠিকঠাক পারিশ্রমিক দিলেও পরে টালবাহানা শুরু করে ।তিন মাস হল ছেলের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েগেছে ।
সেই থেকে তাঁর ছেলে সহ ২০-২১ জন সেখানকার একটা ঘরে কার্যত বন্দি হয়ে থাকছে । রোজগারের টাকা পয়সা শেষহতে বসায় তাঁদের খাবার দাবার যথাযথ মিলছে না ।নূর আলম বলেন, কাশ্মীরে কাজে যাওয়া মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিককে নৃশংস ভাবে প্রাণে মারা হয়েছে। এই খবর জানার পরথেকে তিনি তাঁর সন্তানের জন্য যথেষ্ট উৎকন্ঠায় রয়েছেন । ছেলেদের নিরাপদে দ্রুত ভারতে ফিরে আসার ব্যবস্থা করেদেবার জন্য ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি রেখেছেন বলে নূর আলন জানিয়েছেন । একই রকম উদবেগের কথা শুনিয়েছে গিয়াসউদ্দিন ও হিল্লালের পরিবার ।
এই বিষয়ে কালনার মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে এখনো কেউ কিছু জানায়নি।মহকুমা শাসক জানান ,পরিবার যোগাযোগ করলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন । উর্ধতন কতৃপক্ষের ও দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন ।