বর্ধমান ( প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ) :- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবীদের অন্যতম রাসবিহারী বসু। ১৮৮৬ সালের ২৫ মে তিনি পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।দেশ স্বাধীন হবার পর অতিক্রান্ত হয়েছে ৭২ টা বছর। কিন্তু আজও নিজের জন্ম ভিটাতেই অবহেলিত রয়েগেছেন আজাদহিন্দ ফৌজের জনক রাসবিহারী বসু ।
বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জানাতে নেতা মন্ত্রীরা মাঝে মধ্যে সুবলদহ গ্রামে হজির হন। বিপ্লবীর প্রতিকৃতিতে মালা পরান । ব্যাস ওই টুকুই ।
বাকি সারাটা বছর ঘুটে শুকানো,ধান ঝাড়া ও ধান শুকানোর জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশ বরেন্য বিপ্লবীর জন্মভিটা। এই ঘটনায় ব্যাথিত বিপ্লবীর অনুরাগী ও ইতিহাসবীদরা ।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত নাড়িয়ে দেওয়া রাসবিহারী বসুর পিতা কর্মসূত্রে হুগলী জেলার চন্দননগরে থাকতেন । সেখানকার স্কুল ও কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করে রাসবাহারী বসু বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদেন । ১৯০৮ সালে তিনি আলিপুর বোমা বিস্ফোরন মামলায় অভিযুক্ত হন । কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর গোপনে বাংলা ,উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ গড়ে তোলেন । পরবর্তী সময়ে বাঘা যতীনের একনিষ্ঠ অনুগামী হয়ে ওঠেন রাসবিহারী বসু । দেশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বাদের কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষে নানা বিপ্লবী কর্মকান্ড তিনি চালিয়ে যান ।শেষপর্যন্ত ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এড়াতে তিনি দেশ ছাড়েন। ১৯১৫ সালের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে তিনি জাপানের জাহাজে চড়ে বসেন । জাপানে থেকেও ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যান । জাপান সরকার রাসবিহারী বসুকে “সেকেন্ড অর্ডার অব মেরিট অব দি রাইজিং সান ”খেতাবে ভূষিত করেন । ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানের টোকিওয় রাসবিহারী বসু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
দেশের স্বাধীনতার জন্য এতকিছু করেও রাসবিহারী বসু নিজ ভূমেই উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন । বিপ্লবীকে স্মরণ করার মতো উল্লেখযোগ্য বলতে সুবলদহ গ্রামে রয়েছে তার একটি প্রতিকৃতি মাত্র। বর্তমান রাজ্য সরকার কয়েক বছর আগেই বিপ্লবীর জন্ম ভিটাকে পর্যটন স্থান হিসাবে ঘোষনা করেছে ঠিকই । পর্যটন স্থানটি নজরকাড়া ভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য টাকাও বরাদ্দ হয় । কিন্তু এত সব কিছুর পরেও হাল ফেরেনি বিপ্লবীর জন্মভিটার ।তাই বিপ্লবীর জন্মভিটা এখন ঘুটে শুকানো ,ধান শুকানো ও ধান ঝাড়ার জায়গা হিসাবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে । অবহেলার এখানেই শেষ নয় । শৈশবে বিপ্লবী সুবলদহ গ্রামের যে পাঠশালায় পড়েছিলেন সেই পাঠশালা এখন সুলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে । বিদ্যালয়ে পূর্ণ মর্যাদায় সংরক্ষিত রয়েছে বিপ্লবীর চিতা ভস্ম। এমন ঐতিহ্যশালী বিদ্যালয় এখন ভগ্নদশার চেহারা নিয়েছে । বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মণিদুল ইসলাম বলেন , বিদ্যালয়ের উন্নতির দাবি নিয়ে তিনি প্রশাসনের নানা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁকে হতাশ হয়েই থাকতে হয়েছে । বর্ধমানের বিশিষ্ঠ ইতিহাসবিদ সর্বজীত যশ বলেন , বিপ্লবীর প্রতি মর্যাদা দানে সরকার উদ্যোগী হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বিপ্লবীর প্রতি মর্যাদাদানে প্রশাসন ও সুবলদহ গ্রামের বাসিন্দাদের আরো আন্তরিক হতে হবে ।
রায়না ২ ব্লকের বিডিও দীপ্যমান মজুমদার বলেন , বিপ্লবীর জন্মভিটাকে কেউ ঘুটে শুকানো বা ধান জায়গা হিসাবে ব্যবহার করতে পারে না। কেউ করে থাকলে ঠিক কাজ করেনি ।কেউ যাতে এমন কাজ আর না করে তার ব্যবস্থা নেবেন । একই সঙ্গে বিডিও বলেন ,বিপ্লবীর জন্মভিটা পর্যটন স্থান হিসাবে ঘোষনা হবার তা সাজিয়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ৫৭ লক্ষ টাকা মিলেছিল । বিপ্লবীর জন্ম ভিটার চারপাশে গার্ড ওয়াল দেওয়ার পাশাপাশি টয়লেট তৈরি হয়েছে । পর্যটন কেন্দ্রে সংগ্রহ শালাও রয়েছে ।বসানো হয়েছে একাধীক হাইমাস লাইট । দ্বিতীয় দফায় টাকা মিললে আরো কাজ করা হবে বলে বিডিও জানিয়েছেন ।