প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান, ২৭ নভেম্বর: বঙ্গে এসআইআর (SIR) লাগু হওয়ার পর থেকেই চড়েছে রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ। তারই মধ্যে কাজের চাপের অভিযোগ আনা বিএলও(BLO) দের পক্ষনিয়ে নির্বাচন কমিশনকেও বিঁধে চলেছে
রাজ্য সরকার।এমন আবহের মধ্যেও ভোটার তালিকার ’বিশেষ নিবিড় সংশোধনীর’ কাজে
সাফল্যের নজির গড়লেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পাঁচ বিএলও(BLO)।নির্দিষ্ট ’অ্যাপে’ বুথের ১০০ শতাংশ ভোটারের তথ্য আপলোড’ করে ফেল তাঁরা নথি ইতিমধ্যেই নিজ নিজ ব্লকে জমাও করে দিয়েছেন। ওই পাঁচ বিএলও(BLO) এখন কার্যত জেলার রোল মডেল ।
এসআইআর(SIR) এর কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য বাংলার ৮০ হাজারের বেশি বুথে বিএলও রয়েছে। তারমধ্যে,’সেরা ১০০’বিএলও-র তালিকায় বর্ধমান জেলার পাঁচজন রয়েছেন।তারা হলেন মঞ্জু বাগ,
কবিতা সাহা,অপূর্ব দত্ত ,গনেশ চন্দ্র পাল এবং মেহেমুদ উল আলম। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়,এই পাঁচ বিএলও-র কাজে সাফল্য পাওয়ার নেপথ্যে থাকা কাহিনী নিয়ে ভিডিও তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সেই মতো জেলার কেতুগ্রামের পায়রাকান্দি গ্রামের বিএলও কবিতা সাহার ভিডিও করাও হয়ে গিয়েছে।
পাঁচ সফল বিএলও(BLO) দের মধ্যে ২৬২ জামালপুর (তপঃ)বিধানসভার ৬ নম্বর বুথের বিএলও(BLO) মঞ্জু বাগের বাড়ি মেমারির পাল্লাতে ।তিনি পেশায় জামালপুরের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চক কৃষ্ণপুর ও উত্তম চাঁদপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রর কর্মী।মঞ্জু রাগ জানিয়েছেন
,’তিনি প্রতিদিন সকাল ৬ টার সময় নৌকায় দামোদর পার হয়ে আইসিডিএস কেন্দ্রে পৌঁছাতেন
।সেখানে কচিকাঁচাদের সামলানোর কাজ শেষ করেই তিনি এসআইআর (SIR) এর কাজে নেমে পড়তেন।এসআইআর(SIR) এর কাজ করে রাত ৮ টায় তিনি বাড়ি ফিরতেন।বাড়ি ফিরে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়েই ফের শুরু করে দিতেন ভোটারদের ফিলাপ করে দেওয়া এনুমারেশন ফর্মের তথ্য ’ডিজিটাইজ়’ করার কাজ। এই ভাবে কঠোর পরিশ্রম করেই ’ডিজিটাইজ়’ করার কাজ ১০০ শতাংশ করে ফেলেন বলে মঞ্জু বাগ জানিয়েছেন“। এর জন্য জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে এবং ইআরও(ERO) নীলিমা সামন্ত মঙ্গলবার মঞ্জু বাগকে সম্মানিত করেছেন।
সন্মানিত হয়ে মঞ্জু বাগ বেশ আপ্লুত। বুধবার তিনি
বলেন,“ ৪ নভেম্বর থেকে আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিচ্ছি।এই ক’টা দিন আমি সংসারের কোন কাজই করতে পারি নি। সংসার সামলেছে আমার স্বামী ও ছেলে।এসআইআর এর কাজ করে চলার মধ্যেই মাঝে চার দিন জ্বরে পড়ে যাই। তার জন্য কাজে একটু ব্যাঘাত ঘটে যায় । নয়তো আরও কয়েক দিন আগেই ভোটারদের ফিলাপ করা এনুমারেশন ফর্ম সংগ্রহ করে তা ’ডিজিটাইজ়’ করার কাজ শেষ করে ফেলতে পারতেন,।
এসআইআর (SIR) এর কাজে মঞ্জু বাগের মতই সফল ২৭১ নম্বর কেতুগ্রাম বিধানসভার ১৪৯ নম্বর বুথের বিএলও (BLO) কবিতা সাহা। তিনি বলেন, “আমার বুথে বেশিরভাগ ভোটারই কৃষিজীবী। তাঁরা সকলেই এখন চাষের কাজে ব্যস্ত।সেই কারণে দিনের বেলার চাইতে রাতেই আমাকে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হয়েছে।ভোটারদের অনুরোধ মেনে তাদের এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতেও সাহায্য করতে হয়েছে। ফিলাপ করা সেই ফর্ম নিয়ে তার পর বাড়ি গিয়েছি।তার পরেও বসে থাকি নি।রাত জেগে করে গিয়েছি ভোটারদের ফিলাপ করা এনুমারেশন ফর্মের তথ্য ডিজিটাইজ় করার কাজ। সেই কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলে ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠেই পুণরার এসআইআর (SIR) এর কাজ করে গিয়েছি। এই ভাবে কাজ করার জন্যই দ্রুত ১০০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছেন বলে কবিতা সাহা জানিয়েছেন“।
কেতুগ্রামের পাণ্ডুগ্রাম পঞ্চায়েতের পায়রাকান্দি গ্রাম নিবাসী কবিতা সাহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।তিনি কেতুগ্রামের যে ১৪৯ নম্বর বুথের বিএলও(BLO) সেই বুথে ৫৬৬ জন ভোটার রয়েছেন। অ্যাপের গোলমালের জন্যে ওই বুথের চারজনের তথ্য ‘নট রেকর্ড ফাউন্ড’ দেখানোয় তিনি তাদের এনুমারেশন ফর্মের তথ্য ডিজিটাইজ় করতে পারেন নি“।কবিতা সাহা এও বলেন, আমার বুথের ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে বড়জোর শ’খানেক ভোটার নিজের হাতে ফর্ম পূরণ করে আমাকে জমা দিয়েছে।বাকি অনেকের ফর্ম আমায় পূরণ করে দিতে হয়েছে।আবার অনেকে আমার নির্দেশ মতো এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেছেন।তার কারণে এক-একটা পূরণ করা ফর্ম হতে পেতে আমাকে অনেক বেশি সময় দিতে হয়েছে।”
এসআইআর(SIR)এর কাজে মঙ্গলকোট বিধানসভার মাধপুরের ১৩৫ নম্বর বুথের বিএলও (BLO) মেহেমুদ উল আলমও সফলতা পেয়েছেন ঠিকই ।তবে এই কটা দিন তাঁকে এক কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। মেহেমুদের কথা অনুযায়ী,’ফুসফুসে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা নিউটাউনের একটি সরকারি হাসাপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই অবস্থার মধ্যেই তাঁকে এক দিকে এসআইআর (SIR)এর কাজ করে যেতে হয়েছে।
আবার বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত দায় দায়িত্বও সামলাতে হয়েছে।গত শনিবার তাঁর বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার দু’ঘন্টার মধ্যে বাবা মারা যান।রবিবার বাবার শেষকৃত্য হওয়ার সময়েও তিনি কবরস্থানে বেশীক্ষণ থাকতে পারিনি।বাবার শোক বুকে নিয়ে ওই সময়েও তিনি এসআইআর (SIR)এর কাজ করে গিয়েছেন“ ।
এসআইআর (SIR)এর কাজ এত দায়িত্বশীলতার
সঙ্গে করার প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন? এর উত্তরে মেহেমুদ উল আলম বলেন,’কমিশনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় খুবই মনোযোগী ছিলাম। সেই প্রশিক্ষণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট লক্ষ্য আর সময়ানুবর্তীতা বিষয়টি ঠিক করে নিয়ে কাজশুরু করে ফেলি।তার কারণেই দ্রুত এসআইআর (SIR)এর কাজ শেষ করার ব্যাপারে সফলতা পান বলে মেহেমুদ জানিয়েছেন’।সফলতা পাওয়ার নেপথ্য কারণ হিসাবে মেহেমুদের মতই কেতুগ্রাম বিধানসভার ধান্দলসার ১৭৫ নম্বর বুথের বিএলও (BLO)অপূর্ব দত্ত এবং আউশগ্রাম বিধানসভার ২১৮ নম্বর বুথের বিএলও(BLO) গনেশ চন্দ্র পাল দায়িত্বশীলতা সঙ্গে কাজ করাটাকেই তাঁদের সফলতার চাবিকাঠি বলে দাবি করেছেন।








