নিজস্ব প্রতিবেদন, পূর্ব বর্ধমান: মানবতার আসল পরিচয় কখনো কথায় নয়, কাজে প্রকাশ পায়। সেই কথাটিকেই আবার প্রমাণ করল পূর্ব বর্ধমান জেলার একঝাঁক তরুণ-তরুণী। “হেল্প”—শুধু একটি নাম নয়, এটি আজ এক বিশ্বাস, এক মানবতার প্রতীক। দক্ষিণ দামোদরের মাটিতে কিছু বছর আগে জন্ম নিয়েছিল এই ‘হেল্প পরিবার’। সেই ছোট্ট চারা আজ এক বিশাল বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে, যার ছায়ায় সারা বছর অসহায় মানুষের মুখে ফুটে ওঠে হাসি।

রক্তের চাহিদা পূরণ থেকে শুরু করে বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান, ক্ষুধার্তের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই হেল্প পরিবারের নিরলস প্রচেষ্টা এক অনন্য উদাহরণ। কিন্তু এবারের কাজ যেন ছুঁয়ে গেল মনুষ্যত্বের শিখর।

সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে অসংখ্য পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ে অতি বর্ষণের জেরে জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকের বামুনডাঙ্গা মডেল ভিলেজ, বিশলাইন, হাতিনালা, টন্ডু বস্তি সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো একেবারে জলের তলায় চলে যায়। সেই অসহায় মুহূর্তে, যখন সবাই শুধু খবর দেখছিল, তখন পূর্ব বর্ধমানের হেল্প পরিবার নিজেদের সামর্থ্য মতো ছুটে গেছে সেই দুর্গম গ্রামগুলিতে।

তিন দিন ধরে চলেছে তাদের ত্রাণ কার্যক্রম—রেশন সামগ্রী, পানীয় জল, স্যানিটারি ন্যাপকিন, এমনকি অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ত্রিপল তুলে দিয়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের হাতে। স্থানীয়দের চোখে জল, কিন্তু সেই জলের মধ্যেই হেল্প পরিবারের সদস্যদের দেখে ফুটে উঠেছে কৃতজ্ঞতার হাসি।

এর আগেও তারা পৌঁছে গিয়েছিল আমফান ও ইয়াসের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত সুন্দরবন এ, এছাড়াও হাসনাবাদ, কালীপুর ও খানাকুলের বন্যা কবলিত এলাকায়। তবে উত্তরবঙ্গের এই বন্যা, তাদের ভাষায়—“জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা।” তবুও হাল ছাড়েনি হেল্প পরিবার।

আজ তারা শুধু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নয়—তারা হল মানবতার প্রতীক, সহানুভূতির আলোকবর্তিকা।
যেখানে মানুষের পাশে থাকা মানেই জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া, সেখানে হেল্প পরিবারের এই উদ্যোগ বাংলার বুকে আশার আলো জ্বেলে রাখছে।
হেল্প মানে — Helping Each Life’s Purpose.
তারা প্রমাণ করে দিয়েছে, ভালোবাসা থাকলে কোনো দূরত্বই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।