আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

এবার মর্যাদা পাওয়ার অপেক্ষায় স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী ঘোষের বসত বাড়ি ও ভিটা

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টেপাধ্যায় বর্ধমান

সম্পন্ন হল জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া। এবার হয়তো
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মর্যাদা প্রাপ্তি ঘটবে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তোড়কনা গ্রামে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামী স্যার রাসবিহাসী ঘোষের বসত ভিটা ও বাড়ির। বৃহস্পতিবার রাসবিহারী ঘোষের বসত ভিটে ও বাড়ি সহ মোট ২৩ শতক অর্থাৎ সাড়ে ১১ কাঠা জায়গার দলিল রাসবিহারী ঘোস স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলাশাসক আয়েষা রানী এ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়।অনুষ্ঠানে জেলাশসক ছাড়াও রাসবিহারী ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক পঞ্চানন দত্ত,জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস এবং খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগ উপস্থিত থাকেন।

জেলাশাসক আয়েষা রানী এ বলেন, স্যার রাসবিহারী ঘোষের বসত ভিটা ও বাড়ির জমির দলিল এদিন আমরা হাতে পেলাম। ইতিমধ্যেই একটি আর্কিটেকচার সংস্থা ওই বাড়ি পরিদর্শন করেছে। তারা তাদের রিপোর্ট তৈরি করে দেবে।গোটা বিষয়টি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ, বা
“আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া” (ASI) র কাছে পাঠানো হবে।পাশাপাশি রাজ্য হেরিটেজ বিভাগকেও রিপোর্ট দেওয়া হবে।ভাঙা বাড়িকে অক্ষত রেখেই তার পুননির্মাণ করা হবে।ফাঁকা জমিতে মিউজিয়াম তৈরি করে তুলে ধরা হবে স্যার রাসবিহারী ঘোষের কার্যকলাপ।

স্যার রাসবিহারী ঘোষের জন্ম হয় ১৮৪৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর।তিনি ছিলেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সমাজকর্মী এবং লোকহিতৈষী।দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসেও তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।খণ্ডঘোষ গ্রাম থেকে তিনি তাঁর প্রারম্ভিক জীবন শুরু করেন। ১৯২১ সালের মৃত্যু ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রয়াত হন।তোড়কনার মতো প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দিল্লি গিয়ে রাসবিহারী ঘোষ গোটা দেশ কাঁপিয়েছেন।এহেন মহান ব্যক্তির বসত বাড়িটি আজ জন্মস্থানে কঙ্কালসার হয়ে কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে।ওই বাড়িতে নেই দরজা
, জানালা।সামনের মাঠে গরু চড়ে বেড়ায়। বাড়ির
দেওয়ালের গায়ে দেখাযায় সারি সারি ঘুঁটে। বাড়ির গা বেয়ে উঠেছে লতানে গাছ। যেখানে সাপখোপের আড্ডা থাকাও আশ্চর্য নয়। তারই মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বীর বাঙালির ঐতিহাসিক বাড়ি।

See also  আন্তরাজ্য একটি গ্যাংএর দুই পান্ডাকে গ্রেপ্তার করল বর্ধমান জেলা পুলিশ

দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষ রাসবিহারী ঘোষের বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণার দাবি করে আসছিলেন
।বসত বাড়ি ছাড়াও, মন্দির,পাঠাগার পদ্মপুকুর,
এ সবও রয়েছে রাসবিহারী ঘোষের নামে। কিন্তু তাঁর জন্মভিটে ও বাড়ি সংস্কারের কোনও ব্যবস্থা এতদিধর নেওয়া হয়নি। রাসবিহারী ঘোষ জীবনের কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। অধ্যাপনা দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর পেশাগত জীবন। তারপর বিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনি সম্পূর্ণভাবে আইনি পেশাকে আঁকড়ে ধরেন। তাঁর সহকারীর তালিকা দেখলে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হবে।’বাংলার বাঘ’ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ, কে নেই তাতে। আইনজীবী হিসেবে সেই আমলে অন্যদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি পারিশ্রমিক নিতেন রাসবিহারী ঘোষ।তিনি তাঁর উপার্জনের সিংহভাগই খরচ করতেন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিকল্পে।

বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে নরমপন্থী-চরমপন্থী বিভাজনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন রাসবিহারী ঘোষ। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ স্কুল-কলেজ থেকে বিতাড়িত পড়ুয়াদের জন্য তিনি বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। কার্যত তাঁর চেষ্টাতেই টিকে ছিল বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। মৃত্যুর আগে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা দান করে যান কারিগরি শিক্ষার উন্নতি কল্পে। সেই অর্থেই ১৯২২ সালে যাদবপুরে ৩৩ একর জমিতে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটকে স্থানান্তরিত করা হয়। নতুন নাম হল কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। আজ সেটিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই চেনে গোটা বিশ্ব।

বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগ বলেন, বিধানসভায় তিনি রাসবিহারী ঘোষের জন্মভিটের খারাপ অবস্থার কথা তুলে ধরেন।শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাকে কথা দিয়েছিলেন, বাদল অধিবেশনের পর পরিদর্শন হবে রাসবিহারী ঘোষের বসতভিটেতে।তিনি কথা রেখেছেন।তাই আজ এতবড় একটা কাজ সম্ভব হল।আর রাসবিহারী ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক পঞ্চানন দত্ত বলেন,“এই জমি আমাদের হাতে রাসবিহারী ঘোষের নাতি অলোক ঘোষ তুলে দিয়ে ছিলেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।সেটা আজ জেলাশাসকের হাতে আমরা তুলে দিলাম ।”

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন, মনীষী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যারা এতদিন অবজ্ঞার শিকার হয়ে আসছিলেন তাদেরকে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা আশা রাখি বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর মত দানবীর স্যার রাসবিহারী ঘোষ ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা পাবেন এবং তার বসতভিটাও সংরক্ষিত হবে।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি