আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

নাবালিকা বধূর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার খবর ফাঁস হতেই তোলপাড় প্রশাসনে – শুরু তদন্ত

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ২৫ ফেব্রুয়ারি

বয়স মাত্র ষোল বছর তিন মাস।এই বয়সের এক ছাত্রীর সিঁথি রাঙিয়ে গিয়েছে সিঁদুরে।শাঁখা ও পলায় শোভিত হাতে কলম তুলে নিয়ে ওই ছাত্রী এবছর দিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা তা জানাজানি হতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। নড়ে চড়ে বসেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। ’কন্যাশ্রী ক্লাব’ থাকা স্কুলের একজন ছাত্রী কি করে নাবালিকা অবস্থায় ’বধূ’ বনে গেল, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ।

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ওই নাবালিকা বধূ পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের একটি স্কুলের ছাত্রী।পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডে ছাত্রীটির জন্ম তারিখ ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর বলে উল্লেখ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ছাত্রীটির বয়স এখন সবেমাত্র ১৬ বছর ৩ মাস অতিক্রম করেছে।তারই মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রীটির বিয়ে হয়ে যওয়ার কোন খবরই ছিলনা ব্লক প্রশাসন বা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে।গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস পরীক্ষার দিন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে চলে আসে ।তার পর থেকেই এই ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়।

ইতিহাস পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার জন্য ছাত্রীটি তাঁর স্বামীর সঙ্গে বাইকে চেপে শ্বশুর বাড়ি থেকে রওনা হয়।পথে মেমারি-তারকেশ্বর রোডে
জামালপুর থানার অন্তর্গত চৌবেড়িয়া এলাকায় ছাত্রীটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।তাকে ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেই ছাত্রীটি পরীক্ষা দেয়।সেই খবর পেয়ে ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিতে ব্লকের বিডিও ও পুলিশ আধিকারিকেরা হাসপাতালে পৌছান।একই সময়ে ছাত্রীর স্কুলের এক ’প্যারা’ টিচারও হাসপাতালে পৌছে যান।ওই প্যারা টিচার ওইদিন তাঁর স্কুলের ছাত্রীকে বিবাহিত অবস্থায় দেখলেও ’স্পিকটি নট’ রয়ে থাকেন।যদিও ঘটনা ধামাচাপা থাকে না। সব সত্য পরে ফাঁস হয়ে যায় ।

বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের খ্যাতি এখন বিশ্বজোড়া ।শুধু তাই নয়,নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে রুখতে বঙ্গের প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে রয়েছে কন্যাশ্রী ক্লাব।১৬ বছর ৩ মাস বয়সে বধূ বনে যাওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যে স্কুলের ছাত্রী সেই স্কুলেও কন্যাশ্রী ক্লাব রয়েছে।তার পরেও কি করে নাবালিকা অবস্থায় ছাত্রীটির বিয়ে হয়ে গেল তার কোন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবাশিষ মালিক দিতে পারেন নি।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবাশিষ মালিক সোমবার তাঁর সাফাইয়ে বলেন,“মাধমিক পরীক্ষার আগে আ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার দিন বিদ্যালয় থেকে নির্দিষ্ট করা হয়।ওই দিন অন্য সকল ছাত্রীরা আ্যাডমিট কার্ড নিতে স্কুলে এলেও শুধুমাত্র ১৬ বছর ৩ মাস বয়সী ওই ছাত্রীটি স্কুলে আসে নি। ছাত্রীটির পরিবর্তে তার মা এসেছিলেন । তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার মেয়ে কোথায় ? তখন ছাত্রীটির মা জানান,“মেয়ে অসুস্থ,বাড়িতে
আছে।ছাত্রীটি না আসায় তার মায়ের হাতে আ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয় না।ছাত্রীর আ্যাডমিট কার্ডটি স্কুলেই পড়ে থাকে।

এইভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন এগিয়ে আসে। দেবাশিষ বাবু বলেন,’তখন তিনি অ্যাডমিট কার্ড নিতে না আসা
ছাত্রীটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন ছাত্রীটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তবুও ছাত্রীটি যাতে পরীক্ষাটা দিতে পারে তাই স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের ’নোডাল টিচারকে’ জানিয়ে তিনি ১০ ফেব্রুয়ারী মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিন ছাত্রীটির হাতে আ্যাডমিট কার্ড তুলে দেন। ছাত্রীটি পরীক্ষা দেওয়া শুরু করে। কিন্তু
ইতিহাস পরীক্ষার দিন পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ছাত্রীটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তখনই তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সর্বসমক্ষে চলে আসে।তাই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ওই দিন ব্লকের বিডিও’কে মৌখিক ভাবে জানান বলে দেবাশিষ মালিক দাবি করেছেন। পাশাপাশি সোমবার তিনি জানান,“নাবালিকা অবস্থায় তাঁর স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়ে খুব শিঘ্র তিনি ব্লকের বিডিও কে লিখিত ভাবে সবিস্তার জানাবেন’।

বিডিও (জামালপুর) পার্থসারথী দে জানিয়েছেন,
,“নাবালিকা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত বিষয়ে সোমবার ওই স্কুলে চিঠি পাঠিয়ে তিন রিপোর্ট তলব করেছেন“।জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্রীমন্ত রায় বলেন,“গোটা বিশ্বে প্রশংসিত বাংলার ’কন্যাশ্রী প্রকল্প’ ।এমন প্রকল্প রাজ্যে থাকা সত্ত্বেও ১৬ বছর ৩ মাস বয়সী নাবালিকা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বধূ বনে যাওয়াটা খুবই লজ্জার।এই ঘটনায় রাজ্য সরকার ভাবমূর্তি খুন্ন হয়েছে।কেন এই ’বিয়ে’ রোখা যায় নি তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শ্রীমন্ত রায় দাবি করেছেন“।যদিও জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্প যাই থাক না কেন,বঙ্গে নাবালিকার
বিবাহ হয়েই চলেছে।সাথে সাথে হাসপাতালে নাবালিকা প্রসূতির ভিড়’ও বাড়ছে।এটাই বাস্তব।

এদিকে এমন ঘটনার কথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার’ প্রতিনিধির কাছ থেকে শুনে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান ) আয়েষা রাণী এ কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি বলেন,’এমনটা হওয়া কাম্য ছিল না।নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করার ব্যাপারে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।তার পরেও কি করে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একজন নাবালিকার বিয়ে হয়ে গেল তার রিপোর্ট আমি চাইবো“। অন্যদিকে জেলার সমাজ কল্যাণ আধিকারিক ( DSWO ) সৌরভ কোলে বলেন,“এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।কেউ আমায় কিছু জানায়ও নি। তবে আমি এই ঘটনা বিষয়ে খোঁজ নেব।“

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি