অমলকান্তি হাটি, যিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়নার শ্যামসুন্দর অঞ্চলের চাতর গ্রামের একজন সিঙ্গারা ব্যবসায়ী, তিনি ৩০ বছর ধরে সিঙ্গারা প্রস্তুত করছেন। তাঁর সিঙ্গারার স্বাদ আজ শুধু রায়না নয়, গোটা রাঢ়বঙ্গ জুড়ে প্রসিদ্ধ। তাঁর তৈরি সিঙ্গারা শুধু মুখরোচক নয়, মুগ্ধকরও।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র থেকে রবার্ট ক্লাইভের প্রিয় সিঙ্গারা
অমলকান্তি হাটি জানেন, সিঙ্গারা শুধু একটি খাবার নয়, একটি ঐতিহ্য। নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এবং রবার্ট ক্লাইভের মতো ইতিহাসের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা যে সিঙ্গারা খেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন, তা থেকেই তাঁর অনুপ্রেরণা। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করতে তিনি সিঙ্গারার স্বাদ ও প্রস্তুত প্রণালীতে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন।
বেকারত্ব থেকে সিঙ্গারা সম্রাট হয়ে ওঠার গল্প
অমলকান্তি হাটি বেকারত্বের জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে তেলেভাজা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে বেগুনি, আলুর চপ বিক্রি করলেও তেমন লাভ না হওয়ায় তিনি চিন্তা শুরু করেন আরও মুখরোচক খাবার তৈরির বিষয়ে। এরপরই তিনি সিঙ্গারা প্রস্তুত করতে শুরু করেন এবং এর স্বাদে এমন গুণগত পরিবর্তন আনেন যে, তাঁর সিঙ্গারা বিক্রির সংখ্যা বেড়ে যায়।
সিঙ্গারা তৈরির প্রস্তুতি ও পদ্ধতি
অমলকান্তি হাটি বলেন, “সিঙ্গারার স্বাদের মূল রহস্য ‘পুর’ তে লুকিয়ে থাকে।” তিনি প্রতিদিন ৬০ কেজি আলু, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, নারকেল কুচানো, ধনেপাতা, বিট, গাজর, টমেটো কুচানো, এবং কাজু-কিশমিশসহ অন্যান্য উপাদান নিয়ে সিঙ্গারার ‘পুর’ তৈরি করেন। এই ‘পুর’ তৈরিতে তিনি উচ্চমানের মশলা ও উপকরণ ব্যবহার করেন যা সিঙ্গারাকে তার অদ্বিতীয় স্বাদ দেয়।
দোকানে ১২০০ পিস সিঙ্গারা বিক্রি করার সফল কৌশল
অমলকান্তি প্রতিদিন বিকালে ১২০০ পিস সিঙ্গারা তৈরি করেন এবং সেগুলি মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি করে ফেলেন। তিনি সিঙ্গারার প্রতি পিস ৭ টাকায় বিক্রি করেন এবং প্রতিদিন বিকেলে দোকানে দীর্ঘ লাইন পড়ে। বিকালের ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তার দোকানে সিঙ্গারা বিক্রি হয়, এবং তা একেবারে তাজা ও গরম অবস্থায় খরিদ্দারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অমলকান্তির মুনাফা এবং তাঁর খ্যাতি
অমলকান্তির সিঙ্গারা ব্যবসা এতটাই সফল যে, এখন তিনি “সিঙ্গারা সম্রাট” হিসেবে পরিচিত। তাঁর দৈনিক আয় ৮ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায় এবং তিনি তাঁর পরিবারকে একটি সমৃদ্ধ জীবন উপহার দিয়েছেন। তাঁর মেয়ে মুনমুন খাঁ বলেন, “আমার বাবা আমাদের জন্য সিঙ্গারা ব্যবসার মাধ্যমে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের তিন বোনের বিয়ে দিয়েছেন।”
ক্রেতারা বলেন, “অমলকান্তির সিঙ্গারার স্বাদ অনন্য। এমন স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যায় না।” অমলকান্তি এখন শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, গোটা রাঢ়বঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং তাঁর সিঙ্গারা ব্যবসা দিন দিন আরও প্রসারিত হচ্ছে।