কৃষ্ণ সাহা : রায়না-১ :- পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত রায়নার মাছখান্ডা হাই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক শ্রী রাজেশ হালদার। বিদ্যালয়ের মধ্যেই একটি আস্ত সংগ্রহশালা বানিয়েছেন এই শিক্ষক। এই মিউজিয়ামে পাওয়া যাবে বিদ্যালয় এর প্রথম পর্বের ইতিহাস। শুধু কি তাই ? মৌর্য যুগ, সুলতানি যুগ, পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ আমল এবং পরবর্তী ভারতবর্ষের বিভিন্ন যুগের মুদ্রা রয়েছে মিউজিয়ামে। পরাধীন ভারতবর্ষের গান্ধীজীর সেই হরিজন সেবক পত্রিকা এ ছাড়াও তত্ত্ববোধিনী, ধর্মতত্ত্ব আরও ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য তথ্য মিলবে এই মিউজিয়ামে। ব্রিটিশ শাসনের সময়কালীন দুষ্প্রাপ্য কিছু নথিও সংরক্ষিত আছে এখানে।
স্বাধীন এবং পরাধীন ভারতবর্ষের বেশ কিছু পত্র-পত্রিকা, বর্ধমান রাজাদের কিছু কাগজপত্র ও সিলমোহর আরোও কত কি। বিদ্যালয়ের প্রথম পর্বের শিক্ষকদের ব্যবহৃত এবং প্রধান শিক্ষকদের ব্যবহৃত চেয়ার,বিদ্যালয়ের প্রথম পর্বের ঘণ্টা ,কাগজপত্র রয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র জেলা রাজ্য কিংবা দেশ নয়, বিদ্যালয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস সুসজ্জিত রয়েছে এই মিউজিয়ামে।
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলেন শিক্ষক শ্রী রাজেশ হালদার?
ইতিহাস বিষয়ের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে শিক্ষা কৌশলের এক অভিনব প্রয়াস গ্রহণ করেছেন তিনি। আজকের এই বিদ্যালয়ের আগে কেমন ছিল তা জানার জন্য যাতে আগ্রহী হয় ছাত্রছাত্রীরা তাই এই উদ্যোগ। এছাড়া ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ের পাতায় যা কিছু রয়েছে তার প্রামাণ্য নথি বিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের দেখাতে চেয়েছেন এই শিক্ষক। সব মিলিয়ে বলা যায় অতীতকে ফিরে দেখা এবং ইতিহাসবোধ জাগ্রত করা তাঁর উদ্দেশ্য।
বিদ্যালয়ের এমন একটি সংগ্রহশালা তৈরি করার ক্ষেত্রে এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা ও এগিয়ে এসেছে বাড়ির পুরনো জিনিসপত্র নিয়ে।
বিশিষ্ট সংগ্রাহক শ্রী নবারুণ মল্লিক অনেক পত্র পত্রিকা সহ নানান দ্রব্য বিদ্যালয়ে কে দান করেছেন।
যারা দান করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিশিষ্ট সংগ্রাহক শ্রী নবারুণ মল্লিক মনে করেন, বিদ্যালয়ে এমন এক সংগ্রহশালা তৈরি করে রাজেশ বাবু বিদ্যালয়ের মান কে অনেক উপরে নিয়ে গেলেন। বিদ্যালয়ের মধ্যে এমন সংগ্রহশালা তৈরি হওয়ার কারণে ছাত্র ছাত্রী দের পাশাপাশি এলাকার মানুষ জন ও উপকৃত হবে।
প্রধান শিক্ষক জানান, সংগ্রহশালা তৈরি করার জন্য বিদ্যালয়ের একটি রুম চেয়েছিলেন রাজেশ বাবু। সেই রুম দেওয়া হয়েছিল ধীরে ধীরে তিনি তার সংগ্রহশালা সাজিয়েছেন এবং এখনো সাজিয়ে চলেছেন। আর এতে ছাত্রছাত্রীদের খুবই উপকার হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। বিদ্যালয়ে সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবটারি থাকে। তবে মিউজিয়াম সব বিদ্যালয়ই থাকে না। সেদিক থেকে এটি নিঃসন্দেহে একটি অভিনব উদ্যোগ। ভবিষ্যতে এই প্রয়াস বিদ্যালয়ের কে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে।