করোনার ত্রাসে যখন কাঁপছে গোটা বিশ্ব। দেশ জুড়ে চলা লকডাউনের জেরে যখন সবাই হাঁফিয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই বুক ভরা নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রকৃতি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হাতে অত্যাচারিত হওয়া প্রকৃতি এখন নিজেকে সতেজ করছে। তারই বড় নির্দশন দামোদর নদ। বহু জলজ প্রাণীর জন্ম হচ্ছে দামোদরের ।
পাইপের ফলায় ক্ষতবিক্ষত চেড়া বুকে এখন অক্সিজেন নিচ্ছে দামোদর।নেই ছাকনি মেশিনের অত্যাচার। জেসিবির ফলায় এখন ভয়ে গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে না। আর তাই দামোদরের পাড়ে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। যে নৌকা এতদিন ধরে শুধুই বালি তোলার কাজে ব্যবহার হয়েছে এখন সেই নৌকাই এখন দামোদরে মাছ তুলছে। জেলেরা নৌকায় উঠে জাল ফেলছেন দামোদরের বুকে।
কোথাও উঠছে বাটা মাছ, কোথাও আবার চ্যালা। এছাড়া চিংড়ি থেকে আরও হাজারো ধরণের মাছ এখন নদীজুড়ে। শুধুই মাছ নয়, নদীতে ফিরে এসেছে ঝিনুক, শামুখ থেকে ব্যাঙ। এমনকি সাপও। নদীর ধারে বাঁধের গর্ত থেকে উঁকি মারছে শিয়ালের দল। নদীপাড়ের এলাকায় অনেকেই নদীর পাড়ে এসে সময় কাটাচ্ছেন। নদীর ধারের প্রাকৃতিক পরিবেশে মন ভালো হয়ে যাচ্ছে অনেকেরই। ঘরে থাকার যন্ত্রনা ভুলতে সকালে, বিকালে অনেকেই এখন সময় কাটাচ্ছেন নদীর ধারে। মাছ রাঙাদের জল থেকে মাছ খাবার ছবি তুলে রাখতে মোবাইলে ছবি তুলছেন অনেকেই।
সুখদেব মাঝি বলেন, ‘আমার বাবারা আগে এই দামোদর থেকেই মাছ ধরে সংসার চালাতো। আমরা সেভাবে কোনদিন মাছ ধরতে পারিনি। এখন নদীতে জল আছে। অনেক মাছও বেড়েছে। কোথা থেকে কিভাবে এল এসব বলতে পারবো না। এই সাত দিনে আমি কেজি ছ’য়েক বাটা মাছ বিক্রী করেছি। সাইজে ছোট। গ্রামে আমরা এগুলোকে কাঁচলি বাটা বলি। এই নদীতেই আমি বালি তোলার কাজ করতাম লরিতে। এখন এই নদীতেই মাছ ধরছি।নদীটা অনেক বদলে গিয়েছে এই কয়েকদিনেই।’ বড়শুলের এক গ্রামবাসী অশোক সাহা বলেন, ‘এখন নদীতে শামুখ, ছোট চিংড়ি, চ্যালা থেকে কত ধরণের মাছ আসছে। কালই আমার জালে একটা সাপও উঠেছিল। আজ নৌকা থেকে মাছ ধরছি।’ আবারও দামোদরে প্রাণ ফিরে আসছে। নদীর বাস্ততন্ত্রে পরিবর্তন হচ্ছে। নদী তার চেনা ছন্দে ফিরছে। নদীর ধারে জমা জলে ভেসে আসছে শ্যাওলা। সবুজ জলে ভেসে থাকা ঝিনুকের খোলায় সূর্যের রোদ ঠিক মুক্তর মতনই ছটা দিচ্ছে।