প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৯ জুন
বিদ্যালয় তহবিলে ৫০০ টাকা অনুদান জমা না দিলে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না।পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তোড়কোনা জগবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের এমন নির্দেশে যথেষ্টই বিপাকে পড়ে গিয়েছে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।কলেজে ভর্তি হওয়ার ফি ও স্নাতক স্তরের পাঠ্যপুস্তক কেনার অর্থ জোগাড় করতে হিমসিম খাওয়া ওই পড়ুয়ারা চাইছে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক তাঁর নির্দেশ প্রত্যাহার করুন।ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকরাও একই দাবিতে সরব হয়েছেন।

জেলার স্বনামধন্য বিদ্যালয় গুলির অন্যতম খণ্ডঘোষের তোড়কোনা জগবন্ধে উচ্চ বিদ্যালয় ।
১৮৯৪ সালে এই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। তোড়কোনা গ্রামের ভূমিপুত্র তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী স্যার রাসবিহারী ঘোষ এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই বিদ্যালয়ের ১২২ জন ছাত্র ছাত্রী এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল । তাদের মধ্যে ১১১ জন সফল ভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সেইসব বি পড়ুয়াদের কথায় ,তাঁদের স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকদিন আগেই ২০২২-২৩ এর দ্বদশ শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ( TKJBHS (X11) 2022-2023 ) চালু করেন। সেই গ্রুপের অ্যাডমিন রয়েছেন প্রধান শিক্ষক তপন কুমার চক্রবর্তী।এছাড়াও বিদ্যালয়ের ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আরও একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ( TKJBHS ১২৫ বর্ষপূর্তি ) রয়েছে।৫০০ টাকা স্কুলে জমা না দিলে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট’ দেওয়া হবে না ,এই নির্দেশের কথা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করেছেন বলে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণরা জানিয়েছে।

এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীদের বক্তব্যের সত্যাতা যাচাইয়ের জন্য ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পরখ করে দেখা যায় অভিযোগ মিথ্যা নয়।গ্রুপে দেখা যায়, দিন কয়েক আগে প্রধান শিক্ষক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁর নির্দেশে লিখেছেন,“বিদ্যালয় পরিচালন সমিতি ও পেরেন্টস গার্জেন মিটিংয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে সংঘটিত হবে বিদ্যালয়ের ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উৎসব। তার জন্য দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে ৫০০ টাকা করে সংগ্রহ করা হবে। স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট নেওয়ার সময়েই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের ৫০০ টাকা অনুদান অর্থ স্কুলে মেটাতে হবে । ৫০০ টাকা অনুদান অর্থ না মেটালে স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না বলেও প্রধান শিক্ষক তাঁর নির্দেশে উল্লেখ করেছেন“।
প্রধান শিক্ষকের এমন নির্দেশের বিষয়টি সদ্য
উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্র ছাত্রীদের যথেষ্টই দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। নাম প্রকাশ্যে আনতে অনিচ্ছুক উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী জানিয়েছে,“কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য একটা মোটা টাকা লাগবে। এছাড়াও
স্নাতক স্তরে পঠন পাঠনের বইপত্র কেনার জন্যেও বড় অংকের একটা টাকা জোগাড় করতে হবে । এই দুই খাতের টাকা পয়সা জোগাড় করতে এখন তাদের অভিভাবকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য বিদ্যালয় তহবিলে ৫০০ টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের কাছে অনেক চাপের। তাই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা চাইছেন, অবিলম্বে এমন নির্দেশ প্রত্যাহার করুন প্রধান শিক্ষক । ছাত্র ছাত্রীদের এই দাবির বিষয়ে
অভিভাবকরাও সহমত পোষণ করেছেন।
এমন নির্দেশের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তপন কুমার চক্রবর্তীর কাছে এদিন ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই নির্দেশ জারির কথা স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেন,“বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ,
বিদ্যালয় পরিচালন সমিতি ও অভিভাবকদের নিয়ে হওয়া মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে ।
কিন্তু বিনা বেতনের সরকারী স্কুলে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা পড়ুয়ারা স্কুলে ৫০০ টাকা জমা না দিলে স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পাবে না,এই নির্দেশ কি অনৈতিক নয়?এই প্রশ্নে প্রধান শিক্ষকের ব্যাক্ষ্যা,’ সবার সহযোগীতা ছাড়া ভাল
কিছু করা সম্ভব নয় “।
আর বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যামল দত্ত বলেন, “প্রধান শিক্ষক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁর নির্দেশের বিষয়টি যে ভাবে লিখেছিলেন তাতে একটু ভুল ছিল।পরে বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক
উত্তীর্ণদের বলে দেওয়া হয়েছে,’যাঁরা পারবে তাঁরাই বিদ্যালয়ের ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উৎসবের জন্য ৫০০ টাকা অনুদান অর্থ স্কুলের তহবিলে জমা দেবে’।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডি আই ) শ্রীধর
প্রামাণিক জানিয়েছেন,“ ঘটনা বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন।