কল্যাণ দত্ত :পূর্ব বর্ধমান
কুয়াশা-ঢাকা শীতের সকালে টাটকা এক গ্লাস খেজুরের রসের তুলনা হয় না। মধুবৃক্ষ থেকে আহৃত রস কাঁচা ও জ্বাল দিয়ে খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ রস দিয়ে তৈরি গুড় ও পাটালিরও তুলনা নেই। শীতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস আহহ, এক কথায় অমৃত! শীতের পিঠে-পায়েসের একটি উপাদেয় উপাদান খেজুরের রস। এই রসে তৈরি দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও সুবাসই আলাদা।
শুরু হয়ে গিয়েছে পৌষ মাস। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে খেজুরের চাহিদা বাড়বে। পৌষ পার্বণে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পুলি, পায়েস তৈরি ক্ষেত্রে খেজুর গুড়ের চাহিদা থাকবেই থাকবে।লক ডাউনের ফলে অনেক চাষির কাজ বন্ধ ছিল। এবার তাই নতুন উদ্যোমে চাষিদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই খেজুরের রস সংগ্রহ করার পর গুড় তৈরির কাজ করছেন অসংখ্য চাষি এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন।
শীতে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ কাটেন গাছিরা। খেজুরগাছ থেকে রস বের করার উপযোগী করে কাটা শুরু হয় হেমন্তের প্রথমেই। প্রথম গাছ কাটার পর দ্বিতীয়বার চাঁছ দিয়ে সেখানে বসানো হয় কঞ্চির বিশেষভাবে তৈরি নলি। তার পাশে বাঁশের তৈরি ছোট শলাকা পোঁতা হয় ভাঁড় (কলস) টাঙানোর জন্য। চোখ বেয়ে নলি দিয়ে খেজুর গাছের রস পড়ে ভাঁড়ে। খেজুরগাছ কাটা ও তা থেকে রস বের করার মধ্যেও কিছু কৌশল থাকে । ভালো করে গাছ কাটতে কিংবা রস বের করতে পারেন না অনেকেই ।
কখন, কিভাবে, কোনখানে কেমন করে কাটতে দিতে হবে এবং যার ফলে গাছ মারা যাবে না, অথচ বেশি রস পাওয়া যাবে তা একজন দক্ষ গাছিই ভালো জানেন। একবার গাছকাটার পর ২-৩ দিন পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। প্রথম দিনের রসকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় জিরেন। এ জিরেন রস স্বাদে ও মানে অনন্য। জিরেন রস দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানের গুড় ও পাটালি।
দ্বিতীয় দিনের রসকে বলা হয় দোকাট এবং তৃতীয় দিনের রসকে বলা হয় তেকাট । যা দিয়ে তৈরি হয় ঝোল গুড়। রসের জন্য একবার কাটার পর ৫-৬ দিন বিরাম থাকে কাটা জায়গা শুকানোর জন্য। শুকিয়ে গেলে আবার রস সংগ্রহ চলে। এ সময় সুমিষ্ট, সুগন্ধে মৌ মৌ করে চারদিক।