আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

মেমারিতে বিদ্যালয়ের জতুগৃহে বসেই পঠন পাঠন চালিয়ে যেতে হচ্ছে পড়ুয়া ও শিক্ষককে

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- বিদ্যালয় তৈরি হলেও পরিকাঠামোর কোন উন্নতি না হওয়ায় জতুগৃহে পরিণত হয়েছে শ্রেণীকক্ষ। গোটা বিদ্যালয় চালান একজন মাত্র অতিথি শিক্ষক । আতঙ্ক বুকে নিয়ে জতুগৃহে  বসেই নিত্যদিন  ক্লাস করতে হয় পড়ুয়াদের । তাও আবার এমনই শ্রেণীকক্ষ যার ব্ল্যাক বোর্ডের নিচে রাখা থাকে গ্যাস  সিলিন্ডার । আর শ্রেণীকক্ষের বাইরে দরজার মুখে  চলে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে মিডডে মিলের  রান্না। কোন সরকারি বিদ্যালয় এমন হতে  পারে তা শুনে সবার  অবাক লাগাটাই স্বাভাবিক ।কিন্তু  বাস্তবেই এমন করুণ দশা তৈরি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের  মেমারির জনতা হিন্দি জুনিয়ার হাই স্কুলের। কবে জতুগৃহ দশা কাটিয়ে এই বিদ্যালয়টি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে তার উত্তর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আজানাই রয়ে গিয়েছে । 

মেমারি পুরসভার কৃষ্ণবাজার এলাকায়  রয়েছে জনতা হিন্দি জুনিয়ার হাই স্কুল। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি । সেই থেকে এখনো পর্যন্ত  অনেক শ্রেণীকক্ষে জানালা থাকলেও নেই  কাঠের দরজা । ইটের দেওয়ালে পালেস্তারা বলেও কিছু নেই ।নেই  মিডডে মিল রান্নার নির্দিষ্ট ঘরও । বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত পঠন পাঠন হয় । ৭০ জন পড়ুয়ার পঠন পাঠন এবং বিদ্যালয় পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব সবকিছুই সামলান  একজন মাত্র শিক্ষক। তাও আবার অতিথি শিক্ষক । অভিযোগ ২০১৬  সাল থেকে  বিদ্যালয়ের এমনই অবস্থা হয়ে রয়েছে । পড়ুয়াদের  স্বার্থে এই অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে   প্রশাসনের নানা মহলে দরবার করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অবিভাবকরা। কিন্তু আজ অবধি কোন সুরাহার ব্যবস্থা  হয়নি । 
বিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষক বালচাঁদ রাম জানিয়েছে , শিক্ষক ঘাটতির জন্য  পড়ুয়াদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ।তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ক্লাস  নিতে গেলে ঠায় বসে থাকতে হয় সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের। দিনের পর দিন এমন অবস্থাই মেনেনিতে হচ্ছে । অতিথি শিক্ষক আরো বলেন ,তিনি একা  তিনটি শ্রেণীর  ৭০ জন পড়ুয়াকে  যথাযোগ্য ভাবে পাঠদান করে উঠতে পারছেন না। তাও যতটা সম্ভব  হিন্দিভাষী পড়ুয়াদের যথাযথ শিক্ষাদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অবিভাবকরা বলেন ,  ছেলে মেয়েদের  বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় । এই অবস্থার কথা  এস.আই ছাড়াও  ডি.আই স্কুল এবং জেলাশাসক কে বহুবার জানানো হয়েছে  কিন্তু  সুরাহার কোন ব্যবস্থা  হয়নি ।এদিন বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণীকক্ষে  গিয়ে দেখাগেল শ্রেণিকক্ষের এক দিকে মুখকরে বসে রয়েছে সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়ারা ।

 

একই শ্রেণীকক্ষের অপর দিকে  মুখ করে  আবার বসে  রয়েছে অষ্টম  শ্রেণীর পড়ুয়ারা । অতিথি শিক্ষক একবার একদিকে গিয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছেলে মেয়েদের পড়াচ্ছেন । তখন বসে থাকছে অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়ারা। এরপর আবার অন্য মুখে গিয়ে ওই  শিক্ষকই যখন অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের পড়ানো শুরু করলেন তখন ঠাস  বসে থাকলো সপ্তম  শ্রেণীর পড়ুয়ারা । আরো দেখাযায় শ্রেণীকক্ষের  ব্ল্যাকবোর্ডের ঠিক নিচে রাখা রয়েছে গ্যাস  ভর্তি সিলিন্ডার । আর সেই সিলিন্ডারের উপরে ব্ল্যাকবোর্ডটি দাঁড় করিয়ে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে । শ্রেণীক্ষের দরজার ফুটখানেক দূরত্বে গ্যাসের ওভেন জ্বালিয়ে রান্না করা হচ্ছে মিড ডে মিল ।শ্রেণীকক্ষের ভিতরেই ডাঁই  করে রাখা হয়েছে  মিড ডে মিলের যাবতীয় সামগ্রী । বছরের পর বছর  পরিকাঠামোর কোন উন্নতি না হওয়ায় কার্যত এমন জতুগৃহে বসেই পঠন পাঠন চালিয়ে যেতে বাধ্য হতেহচ্ছে  পড়ুয়াদের । তারা জানিয়েছে বিদ্যালয়ে এসে তাদের আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হয় । অন্যদিকে  মিডডে মিলের রাঁধুনিরাও এদিন স্বীকার করেনেন ,‘অঘটন যেকোন সময়েই ঘটেযেতে পারে । তবে যদি অঘটন ঘটে তবে তার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে । 

বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক (দক্ষিণ)সুদীপ ঘোষ জানিয়েছেন , বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয় । স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সামগ্রিক অবস্থার রিপোর্ট  নিয়ে  সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা  হবে । মেমারর বিধায়ক নার্গিস বেগম জানিয়েছেন , বিদ্যালয়ের  সমস্যা সমাধানের বিষটি নিয়ে  তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন । দ্রুত যাতে এই অবস্থার বদল ঘটানো যায় তার চেষ্টাও চালাবেন । 


See also  কৃষকসেতু নিউজ একনজরে

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি