আবহাওয়া দফতর বুলবুলের আগমন বার্তা দেবার পর ফসলের সর্বনাশ ঘটারআশঙ্কা তৈরি হয়েছিল রাজ্যের চাষীমহলের। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যি হল । বুলবুলের প্রভাবে রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হল পাকা ধান ও রবি ফসলের চাষ । জলে ঢুবেছে জমিতে কেটেরাখা পাকা ধানগাছ ও শীতের সব্জি খেত । অনেক জায়গায় আলু চাষের জমিও এখন জলের তলায় ।জমিতে পোঁতা আলুবীজ নষ্ট হতে বসেছে । এই সবের কারণে মাথায় পড়েছে রাজ্যের শস্যগোলার চাষীদের ।
বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে রাজ্যের অন্যান অংশের এই জেলাতও শুরু হয়েছিল বৃষ্টিপাত । শনিবার সারাদিন ও ভোররাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত । আর বিরামহীন বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে জল জমেযায় । জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানাগেছে, গতবছর ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছিল । ধান হয়েছিল ২০ লক্ষ টনেরও বেশী । এবছর জেলায় সমপরিমাণ জমিতে ধান চায় হয়েছে । তবে একের পর এক অসময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে মনেকরছে চাষীরা । যদিও জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ বুলবুলের প্রভাবে এই জেলায় যে পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হবে, এমন আশঙ্কা তিনি এখনই করছেন না । তবে ভিজে মাঠে ধান গাছ কেটে রাখা যাবেনা । নতুন চাষের জন্য জমি তৈরির কাজও পিছিয়ে যাবে ।
বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক ভাবে বেশী হয়েছে বর্ধমান দক্ষিন মহকুমার রায়না , খণ্ডঘোষ, মেমারি ও জামালপুর ব্লকে । কালনা ও কাটোয়া মহকুমার বেশকিছু অংশেও টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে । তুলনামূলক ভাবে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে ভাতার , আউশগ্রামও গলসিতে । কালনায় পিঁয়াজ চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে । দক্ষিন দামোদর এলাকার চাষী সচিন ঘোষ , হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখরা বলেন , খরিফ মরশুমের ধানে পাক রং ধরেছে।দু’একদিনের মধ্যেই মাঠে ধান কাটার কাজ শুরু হত ।কিন্তু তার আগেই ঝড়ো হাওয়া ও দুদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বেশীর ভাগ জমির ধানগাছ জমিতে শুয়েগেছে । জামালপুরের চাষী ভক্তি দাস বলেন , এবছর খরিফ মরশুমে ধান রোয়ার সময় জমিতে জল ছিল না। সাবমার্সিবেল পাম্প দিয়ে জমিতে জলের জোগান দিতে হয়েছে । তার ফলে এবছর ধান চাষের খরচ অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশী হয়েছে। তার উপর বুলবুলের দাপটে পাকা ধানে মই দেওয়া অবস্থা তৈরি হয়েছে । অনেক ধানের জমিতেই জল দাঁড়িয়ে রয়েছে । যে চাষীরা ধান গাছ কেটে জমিতে পেতে রেখেছিলেন সেই ধান জলে ডুবেছে ।এরফলে উৎপাদন কমবে ধানের রঙ নষ্টও হয়ে যাবে।
শুধু ধান চাষে ক্ষতি নয় । আলুচাষেও ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার শক্তিগড়, বড়শুল ও মেমারি এলাকার আলু চাষীরা । খব কমদিনে আলুর ফলন পাবার জন্য এই সব এলাকার চাষীরা মূলত পোকরাজ প্রজাতির আলুচাষ করেন । জমিতে আলু বীজও পুঁতে ফেলে ছিলেন এইসব এলাকার বেশীর ভাগ চাষী ।
এমনিতেই রাসায়নিক সার , কীটনাশকের দামের পাশাপাশি ক্ষেতমজুরদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে । সবমিলিয়ে নতুন করে আবার আলুচাষ করে লাভের মুখ কিছু দেখা যাবেকিনা তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় জেলার আলু চাষীরা । সরকার কি ব্যবস্থা নেয় এখন সেদিকেই তাকিয়ে শস্যগোলার চাষীরা । ছবি ধান জমি ও আলু জমি ।
আলুচাষীরা এখন ঘোর সংকটে। প্রথমতঃ আলুর বীজ কিনতে হবে চড়াদামে।দ্বিতীয়ত পোকরাজ প্রজাতির আলুর বীজ মিলবে না।সবনিয়ে আলুচাষীদের এখন মাথায় হাত।গত কয়েক বছরে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বাড়ায় আলু চাষের খরচও বেড়েছে সাংঘাতিক। আলুচাষীরা বলেন এবছর গড়ে আলুচাষে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা করে প্রতি বিঘেতে।