আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

বুলবুলের প্রভাবে পূর্ব বর্ধমানে ধান ও আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মাথায় হাত চাষীদের

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

বহাওয়া দফতর বুলবুলের আগমন বার্তা দেবার পর ফসলের সর্বনাশ ঘটারআশঙ্কা তৈরি হয়েছিল রাজ্যের চাষীমহলের। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যি হল । বুলবুলের প্রভাবে রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত  পূর্ব বর্ধমান জেলায়  ক্ষতিগ্রস্ত  হল  পাকা ধান ও  রবি ফসলের চাষ । জলে ঢুবেছে  জমিতে কেটেরাখা পাকা ধানগাছ ও  শীতের সব্জি খেত ।  অনেক জায়গায়  আলু চাষের জমিও এখন জলের  তলায় ।জমিতে পোঁতা আলুবীজ নষ্ট হতে বসেছে । এই সবের কারণে মাথায় পড়েছে রাজ্যের শস্যগোলার চাষীদের । 

বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে  রাজ্যের অন্যান অংশের এই জেলাতও শুরু হয়েছিল বৃষ্টিপাত । শনিবার সারাদিন ও ভোররাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ঝোড়ো হাওয়া ও  বৃষ্টিপাত  । আর বিরামহীন  বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে জল জমেযায় । জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানাগেছে,  গতবছর ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছিল । ধান হয়েছিল ২০ লক্ষ টনেরও বেশী । এবছর জেলায় সমপরিমাণ জমিতে ধান চায় হয়েছে ।  তবে  একের পর এক অসময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান উৎপাদন  ব্যাহত হবে বলে মনেকরছে চাষীরা ।  যদিও জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা  জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ বুলবুলের প্রভাবে এই জেলায় যে পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে  ধান চাষে ব্যাপক  ক্ষতি হবে, এমন আশঙ্কা তিনি এখনই করছেন না । তবে ভিজে মাঠে ধান গাছ কেটে রাখা যাবেনা । নতুন চাষের জন্য জমি তৈরির কাজও পিছিয়ে যাবে ।

বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক ভাবে বেশী হয়েছে বর্ধমান দক্ষিন মহকুমার রায়না , খণ্ডঘোষ, মেমারি ও  জামালপুর  ব্লকে । কালনা  ও কাটোয়া মহকুমার বেশকিছু অংশেও টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে । তুলনামূলক ভাবে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে ভাতার , আউশগ্রামও গলসিতে । কালনায় পিঁয়াজ চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে । দক্ষিন দামোদর এলাকার চাষী সচিন ঘোষ  ,  হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়  প্রমুখরা বলেন , খরিফ মরশুমের ধানে পাক রং ধরেছে।দু’একদিনের মধ্যেই  মাঠে ধান কাটার কাজ শুরু হত ।কিন্তু তার আগেই ঝড়ো হাওয়া ও দুদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বেশীর ভাগ জমির ধানগাছ  জমিতে শুয়েগেছে । জামালপুরের চাষী ভক্তি দাস বলেন , এবছর খরিফ মরশুমে ধান রোয়ার সময় জমিতে জল ছিল না। সাবমার্সিবেল পাম্প দিয়ে জমিতে জলের জোগান দিতে হয়েছে । তার ফলে এবছর ধান চাষের  খরচ অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই  বেশী হয়েছে। তার উপর বুলবুলের দাপটে পাকা ধানে মই দেওয়া অবস্থা তৈরি হয়েছে । অনেক ধানের জমিতেই জল দাঁড়িয়ে রয়েছে । যে চাষীরা  ধান গাছ কেটে  জমিতে পেতে  রেখেছিলেন সেই ধান জলে ডুবেছে ।এরফলে উৎপাদন কমবে ধানের রঙ নষ্টও হয়ে যাবে।

শুধু ধান চাষে ক্ষতি নয় ।  আলুচাষেও ক্ষতির মুখে পড়েছেন  জেলার শক্তিগড়, বড়শুল ও মেমারি এলাকার আলু চাষীরা । খব কমদিনে আলুর ফলন পাবার জন্য এই সব এলাকার চাষীরা মূলত পোকরাজ প্রজাতির আলুচাষ করেন । জমিতে আলু বীজও পুঁতে ফেলে ছিলেন এইসব এলাকার বেশীর ভাগ চাষী । 

লুচাষী  দেবকুমার মালিক ,হাজিবুল সেখ প্রমুখরা বলেন ,বুলবুলের প্রভাবে হওয়া দুদিনের টানা বৃষ্টিতে  আলুর জমিতে জল দাঁড়িয়ে গেছে। এরফলে সবটাই ক্ষতি হল । আবার নতুন করে জমি তৈরি করে আলুর বীজ পুঁততে হবে।হাজিবুল সেখ বলেন ,এবার চড়া দামে আলুবীজ কিনতে হবে । পোকরাজ আলুবীজ মিলবেকিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে । নতুন করে জমি তৈরি ও বীজ পোঁতার জন্য ফের মোটা টাকা খরচ হবে ।

 এমনিতেই রাসায়নিক সার , কীটনাশকের দামের পাশাপাশি  ক্ষেতমজুরদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে । সবমিলিয়ে নতুন করে আবার আলুচাষ করে লাভের মুখ কিছু দেখা যাবেকিনা  তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় জেলার আলু চাষীরা । সরকার কি ব্যবস্থা নেয় এখন সেদিকেই  তাকিয়ে শস্যগোলার চাষীরা । ছবি ধান জমি ও আলু জমি ।

 লুচাষীরা এখন ঘোর সংকটে। প্রথমতঃ আলুর বীজ কিনতে হবে চড়াদামে।দ্বিতীয়ত পোকরাজ প্রজাতির আলুর বীজ মিলবে না।সবনিয়ে আলুচাষীদের এখন মাথায় হাত।গত কয়েক বছরে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বাড়ায় আলু চাষের খরচও বেড়েছে সাংঘাতিক। আলুচাষীরা বলেন এবছর গড়ে আলুচাষে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা করে প্রতি বিঘেতে।

See also  ওন্দা ব্লকের তপবন গ্রামের পাশে দ্বারকেশ্বর নদে বালি খোড়ার সময় উদ্ধার বিষ্ণু বিগ্রহ

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি