বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েই চলেছে চাষীরা । কৃষি ও পরিবেশ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বত্র চলছে চাষের জমিতে নাড়া পোড়ানো । এরফলে পরিবেশ দূষণ যেমন মাত্রা ছাড়াচ্ছে তেমনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমিতে থাকা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান । অতি সম্প্রতি দূষণের ধোঁয়াসায় ঢাকা পড়েছিল দেশের রাজধানী শহর দিল্লী।
কলকাতাতেও বেড়েচলেছে দূষণের মাত্রা । দূষণজনিত এমন পরিস্থিতি থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য কৃষি দপ্তর ও পরিবেশ বিদরা জমিতে নাড়া পোড়ানো থেকে চাষীদের বিরত হবার কথা বারে বারে বলে চলেছেন । নাড়া পোড়ানো যে বেআইনি সেই বিষয়টি তুলেধরে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও পথে নেমে প্রচার চালাচ্ছে । কিন্তু এতসব কিছুর পরেও জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধে চাষীর কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ।

রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা । এই জেলার চাষীরাই যে শুধু জমিতে নাড়া পোড়াচ্ছেন এমনটা নয় । অন্য জেলার চাষীরাও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জমিতেই নাড়া পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ । “শীতের শুরুতেই বেশ কয়েকদিন ধরে দূষণের ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েথাকে দেশের রাজধানী শহর দিল্লী ।
ওই ধোঁয়াশার কারনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল দিল্লী বাসির জনজীবন ।ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসেন আবহাওয়া ও পরিবেশ দপ্তর। তার কারণ অনুসন্ধানে আশরে নামেন পরিবেশ বিদরা ।সবদিক খতিয়ে দেখে পরিবেশ বিদরা নিশ্চিত হন দূষণের কারণেই ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েছে দিল্লী শহর । এই ক্ষেত্রেও মুখ্য কারন হিসাবে সামনে আসে চাষের জমিতে নাড়া পোড়ানোর ঘটনা ।
‘অনুসন্ধানকারী পরিবেশ বিদরা জানতে পারেন শীত শুরুর প্রক্কালে দিল্লীর গুরগাঁও সহ পার্শবর্তি এলাকার চাষীরা কম্বাইন হারবেস্টার মেশিনের সাহায্যে জমির ফসল কাটা ও ঝাড়ার কাজ সেরেছেন ।ঝাড়াই কাজ শেষে হবার পর ফসলের অপ্রয়োজণীয় অংশ অর্থাৎ নাড়া জমিতে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন সেখানকার চাষীরা ।
ওই নাড়া পোড়ানোর ধোঁয়া শীতের জলিয় বাস্পের সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশায় পরিণত হয় । আর সেই ধোঁয়াশায় সমগ্র দিল্লী ঢাকা পড়ায় শ্বাস কষ্টে ভুগতে হয় দিল্লীবাসীকে ’।
মঙ্গলবার জালালপুরে অনুষ্ঠিত কৃষি মেলায় যোগ দেন রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন , “জমিতে নাড়া পোড়ালে প্রচুর পরিমানে উদ্ভিদ খাদ্য নষ্ট হয়ে যায় । আমন চাষ মরশুমে খড়ের অবশিষ্ট অংশ জমিতে পুড়িয়ে দেবার বদলে গর্তকরে জমিতে ফেলে মাটি চাপা দিলে মাটির জৈব কার্বন বৃদ্ধি পাবে । কৃষি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি মাটি সবথেকে মূল্যবান । জমিতে নাড়া পোড়ালে মাটির গঠন ও গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
জমিতে নাড়া পোড়ালে উপকারি জীবাণু উত্তাপের কারণে ধ্বংস হয়ে যায় । নষ্ট হয়ে যায় জমির গুনগত মান । জমি বন্ধা হয়ে যায় । ধানের নাড়া পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর দূষিত গ্যাস নির্গত হয় । যা মনুষের স্বাস্থের পক্ষেও ক্ষতিকর । জমিতে নাড়া পোড়ানোর সময় আগুনের ফুলকি উড়ে পাশের জমিতে থাকা চাষীর পাকা ধানও পুড়ে ভস্মিভূত হবার সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় থাকে ।
প্রদীপ মজুমদার জানান, হারভেস্টার মেশিনে ধান ঝাড়ার পর খড়ের অবশিষ্ট অংশ কমপোস্ট বা ডার্বি কমপোস্ট সার তৈরির কাজে লাগালে চাষীরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনই দূষণ থেকেও রাজ্যবসি রক্ষা পাবে ।কষি উপদেষ্টা কৃষি মেলায় উপস্থিত চাষিদের জমিতে নাড়া পোড়ানো থেকে বিরত হবার বার্তা দেন ।