উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে জগদীপ ধনকড়ের হঠাৎ পদত্যাগ ঘিরে যখন দেশজুড়ে আলোচনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই বুধবার নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করল নির্বাচন কমিশন। ওইদিন কমিশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং খুব শিগগিরই ভোটগ্রহণের দিন ঘোষণা করা হবে।
কমিশনের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপাতত ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ গঠনের কাজ চলছে। (এই কলেজ গঠিত হয় লোকসভা ও রাজ্যসভার নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যদের নিয়ে)। এখনও রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নাম নির্ধারিত হয়নি, এই প্রক্রিয়াও চলছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য অতীতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করছে কমিশন। যদিও ধনকড় তাঁর পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, দায়িত্ব ছাড়েন। তিনি দায়িত্বে ছিলেন মাত্র দু’বছর। নতুন যিনি ওই পদে বসবেন, তিনি পূর্ণ পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন।

এই পরিস্থিতিতে কে বসতে চলেছেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ছ’মাসের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। সেই সময় পর্যন্ত রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানকেই উপরাষ্ট্রপতি এবং চেয়ারম্যানের কাজ সামলাতে হয়। ফলে আগামী ছ’মাস হরিবংশকে এই দায়িত্ব সামলাতে হতে পারে। যদিও সম্ভাবনা রয়েছে, তার আগেই ওই পদে নিযুক্ত করা হতে পারে নীতীশ কুমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই জেডিইউ নেতাকে। কারণ চলতি বছরের শেষে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন, সেই প্রেক্ষিতে নীতীশকে খুশি করতেই কেন্দ্র এমন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত।
তবে, হরিবংশ একমাত্র প্রার্থী নন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় আরও অনেকের নাম উঠে আসছে। রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা, রাজনাথ সিং-কে এই পদে বসানো হতে পারে। আরএসএসের নির্ধারিত ৭৫ বছরের অবসর নীতির কারণে রাজনাথ সিংকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না ভাবার জল্পনার পর, তাঁকে এই পদে বসিয়ে নরেন্দ্র মোদির সামনে থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। অন্যদিকে তালিকায় উঠে আসছে নীতীশ কুমারের নামও। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে উপরে তুলে, বিহারে বিজেপির কোনও নেতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার রণকৌশল নিয়েছে গেরুয়া শিবির।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে আরও কিছু অপ্রত্যাশিত নাম। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের নামও উঠে আসছে আলোচনায়। তাঁকে এই পদে উপযুক্ত বলে মনে করছেন অনেকেই। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসায় তাঁকে একাধিকবার সরব হতে দেখা গিয়েছে, যার ফলে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তিনি হয়তো বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। এই পটভূমিতে মোদির সরকার তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে এক নতুন বার্তা দিতে চাইতে পারে, যা তাদের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি তুলে ধরবে।