হিন্দু পুরাণ অনুসারে নয়টি ভিন্ন রুপে পূজিতা হন দেবী পার্বতী অর্থাৎ দেবী দুর্গা । শৈলপুত্রী ,চন্দ্রঘন্টা , ব্রহ্মচারিণী, স্কন্দমাতা, কুম্মাণ্ডা ,কালরাত্রি , কত্যায়নী,মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী ,এই হল দেবীর নয় রুপ। এমনই ভিন্ন রুপের নয় নারীর একান্ত উদ্যোগে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মণিরামবাটি গ্রামে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা । তাদের আয়োজিত দুর্গা পুজা এবছর চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করেছে । বাজেট সামান্য হলেও মা দুর্গা মহিলা সমিতির সদস্য ভক্তিভাব ও আন্তরিকতা টেক্কা দিচ্ছে বড়বাজেটের পুজো আয়োজকদেরও ।প্রশাসনিক অনুমতি নিয়ে সুশৃংখল ভাবে পুজো আয়োজনের জন্য মা দুর্গা মহিলা সমিতিকে বিশেষ ভাবে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামালপুর থানা । মহাসপ্তমীর সন্ধায় জামালপুর থানার পুলিশ কর্তারা মা দুর্গা মহিলা সমিতির সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলেদেন । পুরুষরা মুখ লুকোলেও প্রথমবার পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত মণিরামবাটি গ্রামের বধূরা ।
দুর্গা মাতা মহিলা সমিতির সম্পাদিকা কুমকুম বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন , তাঁদের গ্রামে দুর্গা পুজো না হওয়ায় পূর্বে সবাই আফসোস করতো । তাসত্ত্বেও গ্রামের পুরুষরা কেউই দুর্গা পুজোর আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়নি । মণিরামবাটির জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো নিয়েই শারদোৎসবের কটাদিন কাটাতে বাধ্য হত গ্রামের মানুষজন । কুমকুমদেবী বলেন, জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটার পরেও জমিদার বাড়ির পুজো অাঁকড়ে শারদোৎসব কাটোনোর পক্ষপাতী তিনি এবং তাঁর সহযোগী মহিলারা ছিলেন না । তাই তারা স্থির করেন গ্রামের বধূরা মিলেই দুর্গা পুজোর আয়োজন করবেন । কুমকুমদেবী বলেন এরজন্য কটুক্তি সমালোচনা অনেককিছুই শুনতে হয়েছে । তবে সবকিছুকে দূরে সরিয়েরেখে তিনি এবং গ্রামের অপর বধূ চিন্ময়ী, টগরি , মিনতি , অপর্ণা , ঝর্ণা , কৃষ্ণা এবং সাধনা কর্মকার ও সাধনা ধারা মিলে চারবছর আগে গ্রামে প্রথম দুর্গা পুজোর আয়োজন করেন । সেই শুরু তারপর থেকে তারা আর পিছন ফিরে তাকাননি ।এবছর তাঁদের পুজো চতুর্থ বর্ষে পা রাখলো ।
চিন্ময়ী নন্দী , সাধনা কর্মকার প্রমুখরা জানিয়েছেন , এবছর তাঁদের পুজোর বাজেট মাত্র ৪৫ হাজার টাকা । তারমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা । নয় বধূ মিলে গ্রামের ১১৪ ঘর বাসিন্দার বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তুলেছেন । যথসামন্য সেই চাঁদার অর্থ এবং বাকিটা নয় বধূ মিলে দিয়ে এবছর সমস্ত পুজোর আয়োজন সম্পূর্ণ করেছেন । আগামীদিনে গ্রামে দুর্গা মন্দির গড়ে বড়করে দেবী দশভূজার আয়োজন করার বাসনার কথা শুনিয়েছেন মা দুর্গা মহিলা সমিতির সদস্যরা ।