ওভার লোড বালি বোঝাই লরি গৃহস্থের বাড়িতে উল্টেপড়ায় মৃত্যু হল ঘুমন্ত অবস্থায় থাকি একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের। জখম হয়েছেন ওই পরিবারের আরও এক সদস্য। মঙ্গলবার গভীর রাতে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের গলসির শিকারপুরে । মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনার জরে বর্ষ শুরুর দিনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গলসির শিকারপুর এলাকা । বুধবার সকালে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে ঘিরেও শুরে হয় তুমুল বিক্ষোভ । পুলিশকে মৃতদেহ তুলতে না দিয়ে উত্তেজিত জনতা এলাকার একাধিক বালিঘাটে চড়াও হয় । জনরোষ বালিঘাটে আছরেপড়ে । উত্তেজিত এলাকাবাসী বালি ঘাটে থাকা একাধীক ডাম্পার ,লরি ,ট্র্যাক্টার ,জেসিবি ও মোটর বাইকে আগুন ধরিয়েদেয় ।
আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বালিঘাটের অফিসেও। উত্তেজনার কারণে আশান্তি এদিন দুপুর পর্যন্ত পুরোমাত্রায় অব্যাহত থাকে । জনরোষ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকাল ৪টে নাগাদ বিশাল পুলিশ ও র্যাফ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছায় । লাঠিচার্য করে পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেদিয়ে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে । মৃতদেহ উদ্ধারে বাধাদেবার ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে । এদিনই মৃতদেহ গুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে । উত্তেজনা থাকায় এলাকায় জারি রয়েছে পুলিশ টহল । ঘাতক লরি ও তার চালককে আটক করে পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে মৃতদের নাম বাপি মন্ডল (৩৬), দোলন মন্ডল(২৭), নন্দিনি মন্ডল(৮), আবির মন্ডল (২) ও সুচিত্রা মালিক (৫০)।বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম ব্যক্তির নাম শ্রীকান্ত মালিক । স্থানীয়রা জানিয়েছেন , মৃত ও জখমরা সকলেই একই পরিবারের সদস্য । দোলন ও বাপি সম্পর্কে সুচিত্রার মেয়ে জামাই । এই দম্পতিরই মেয়ে নন্দিনি ও ছেলে আবির । জখম শ্রীকান্ত হলেন সুচিত্রাদেবীর ছেলে ।
শিকারপুর এলাকার বাসিন্দা মিলন মণ্ডল, তারক চট্টোপাধ্যায় ,নিমাইচন্দ্র ঘোষ প্রমুখরা জানিয়েছেন ,প্রতিনিয়ত ওভারলোড বালির লরি যাতায়াতের কারণে শিকারপুর থেকে গলসি যাবার রাস্তাটি যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে । শিকারপুরের ওই রাস্তার ধারে ছিটেবেড়ার ঘরে দিনদরিদ্র সুচিত্রাদেবী ও তার পরিবার সদস্যরা থাকতেন ।মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওই ঘরে পরিবারে সদস্যরা অঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন । আকন্ঠ মদপান করে মধ্যরাতে ওই বেহাল রাস্তাদিয়ে ওভারলোভ বালি বোঝাই লরি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল চালক । তিনি লরির নিয়ন্ত্রন সামলাতে ব্যর্থ হন । বালি বোঝাই লরি রাস্তাথেকে সজোরে গিয়ে উল্টেপড়ে ওই গৃহস্থের বাড়িতে ।
লরিতে মজুত থাকা বালির নিচে চাপা পড়েযান ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা পরিবার সদস্যরা । খবর পেয়ে গলসি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে বালি চাপা পড়াথাকা পরিবার সদস্যদের উদ্ধার কাজ শুরু করে ।তারইমধ্যে দমবন্ধ হয়েগিয়ে মৃত্যু হয় পরিবারের পাঁচ সদস্যের । কোনরকমে পুলিশ জখম অবস্থায় পরিবারের একজনকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে পাঠায় । মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হতেই বুধবার সকালথেকে শিকারপুর এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়েওঠে । অবৈধ বালিখাদান বন্ধ করার পাশাপাশি ওভারলোড বালি বোঝাই লরি ও ডাম্পার চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবিতে সরব হন এলাকাবাসী । এই অবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিজেপির লোকজনও ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষোভ অবরোধ শুরু করেদেয় । পাল্টা আশরে নামে শাসক দলের লোকজন ।
তানিয়ে দুপক্ষের মধ্যে তুমুল গোলযোগ অশান্তি বেঁধেযায় । রমন শর্মা নামে এক বিজেপি নেতাকে রাস্তায় ফেলে শুরু হয়েযায় মারধোর । পুলিশ কোন রকমে পরিস্থিতি সামালদিয়ে দুপক্ষকে সরিয়েদেয় । উত্তেজনা থাকায় পুলিশ এলাকায় টহলদারি চালাচ্ছে। স্থানীয় নিমাইচন্দ্র ঘোষ বলেন , ৩১ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত বালিঘাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ । বালি বোঝাই লরিগুলি বালি ঘাটেই আটকে ছিল । সেই সব বালি বোঝাই লরি কার নির্দেশে বালিঘাট থেকে ছাড়া হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন নিমাই বাবু। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগে বলেন , গলসির বালিঘাট গুলিতে এখন অবাধে মদ বিক্রী চলছে । ঘাতক লরির চালক সেখানেই আকন্ঠ মদ্যপান করেন । চালক মদ্যপ থাকি সত্ত্বেও তাঁকে লরিনিয়ে বের হতে দেওয়াতেই ঘটেছে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা । অবৈধ বালিখাদান বন্ধ ও ওভারলোড বালি পরিবহন বন্ধে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নানিলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে বলে এলকাবাসী হুঁশিয়ারী দিয়েছেন ।
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন,পুলিশ এদিন অনেক ধৈর্য দেখিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ।আট জনকে আটক করা হয়েছে জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন,গলসির ঘটনার সবিস্তার মুখ্যসচিবকে জানানো হয়েছে ।পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ।ওই বালিখাদান থেকে বালি তোলা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করেদেওয়া হবে ।