প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- করোনা ভারাস সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতেই গুজবের জরে বেড়ে গিয়েছিল গোমুত্র ও
গোবরের কদর। এবার বাড়ির ঈশান কোনে গর্ত খুঁড়ে বেরকরা কাঠকয়লা দিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর হিড়িক পড়েগেছে ।বাড়িতে থাকা ছোট পাথরের উপর সেই কাঠকয়লা ঘসে নিয়ে তার তিলক কপালে লাগালেই নাকি করোনা আক্রান্ত হতে হবেনা ।এই গুজবে ভর করেই পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষজন শুরু করে দিয়েছেন কপালে কাঠকয়লা তিলক লাগানো । মুখে মাস্ক ব্যবহার শিকেয় তুলে গ্রামবাসীরা করোনার দাওয়াই হিসাবে পোড়া কাঠের তিলক পরাতে ভরসা করায় উৎকন্ঠা বেড়েছে চিকিৎসক মহলে ।
কাঠকয়লার তিলক নিয়ে গুজবের মারাত্বক প্রভাব পড়েছে হুগলী ও পূর্ব বর্ধমান জেলায়। পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের পাঁচড়া,বেরুগ্রাম,আঝাপুর,কোলসরা,আবুহাটি সহ রায়নার উচালন ,সেহারাবাজার এবং আউশগ্রাম ব্লকের অভিরামপুরের বাসিন্দারা সবাই এখন মেতেছেন কপালে পোড়া কাঠকয়লার তিলক পরাতে । শনিবার জামালপুরে পাঁচড়া ও বেরুগ্রাম এলাকায় পৌছে দেখাযায় অনেক বাসিন্দা তাঁদের বাড়ির ঈশান কোনে গর্ত খুঁড়তে ব্যস্ত ।কেউ কেউ গর্ত খুঁড়ে পাচ্ছেন পোড়া কাঠের টুকরো। আবার কেউ কেউ তাঁদের বাড়ির ঈশান কোনে গর্ত খুঁড়েতেই পোড়া কাঠ ছাড়াও বেরিয়ে আসছে সিঁদুরের পাতা ও কড়ি । সবকিছুই স্বযত্নে তুলে নিয়ে ওইসব বাসিন্দারা ঘরে চলে যাচ্ছেন । একই ভাবে পোড়া কাঠের টুকরো অর্থাৎ কঠকয়লা নিয়ে ঘরে ঢুকেপড়েন জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা সুমন চট্টোপাধ্যায়। এদের দেখাদেখি প্রতিবেশীরাও
পোড়া কাঠকয়লা উদ্ধারে নেমে পড়েন ।
পোড়া কাঠকয়লার তিলক কি দাওয়াইয়েয় কাজ করবে তা সুমন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আজব কথা শোনালেন । সুমনবাবু বলেন,হুগলী নিবাসী তাঁদের এক আত্মীয় জানিয়েছেন ‘তারকেশ্বর মন্দিরের এক পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন প্রতেক বাসিন্দা তাদের বাড়ির সদর দরজার ডানদিকে গর্ত খুঁড়লেই পোড়া কাঠ অর্থাৎ কাঠকয়লা মিলবে। সেই কাঠ কয়লার টুকরো গঙ্গাজল সহ পাথরে ঘসে কপালে তিলক পরলেই করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই মিলবে। করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবার এটাই ঠাকুরের ওষুধ। ’সুমন বাবু স্পষ্ট জানিয়েদেন
এই কথা শোনার পর তিনিও তা মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আউশগ্রামের অভিরামপুর
গ্রামের বধূ মামনি রজক এদিন আবার যা বললেন তা জানলে কার্যত বিশ্বের তাবড় চিকিৎসকরাও চমকে উঠবেন । মামনিদেবী বলেন ,‘করোনা সংক্রমণ রোধে কি করতে হবে তা নাকি ঠাকুর এক পুরোহিতকে স্বপ্নাদেশে জানিয়ে দিয়েছে । সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী সূর্য ওঠার আগে বাড়ির তুলসী মন্দির কিংবা বাড়ির দরজার ডানদিকে গর্ত খোঁড়া শুরু করেদিতে হবে ।গর্ত খুঁড়লেই পোড়া কাঠ মিলবে। সেই পোড়া কাঠের টুকরো গুড়িয়ে নিয়ে গঙ্গাজল দিয়ে মিশিয়ে কপালে তিলক পরলে আর করোনা আক্রান্ত হতে হবে না ।’ মামনিদেবী এদিন নিজে সেটাই করেছেন বলে জানিয়েজেন । তিনি নিজের কপালে ওই তিলক পরেছেন এবং বাড়ির সবাইকেও একই তিলক পরিয়েছেন । প্রতিবেশীরাও একই রকম ভাবে কাঠকয়লার তিলক পরতে বলেছেন বলে মামনিদেবী জানিয়েছেন ।
মামনিদেবীর প্রতিবেশী পরিবারের বধূ মিঠু মুখোপাধ্যায় বলেন , করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তিনি এদিন বাড়ির দরজার ডানদিকে গর্ত খুঁড়েতেই পোড়া কাঠের টুকরো পান । কাঁসার পাত্রে গঙ্গাজল ও তুলসী পাতা দিয়ে তারমধ্যে ওই পোড়া কাঠের টুকরোটি ফেলেদিয়ে করোনা থেকে মুক্তি চেয়ে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেন । প্রার্থনা শেষে ওই কাঠকয়লার গুঁড়োর তিলক নিজে কপালে পরেন এবং বাড়ির স্বামী ও সন্তানদের কপালেও তিলক পরিয়ে দিয়েছেন।
দুপুর গড়ানোর পর এই গুজব জেলার সর্বত্র দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে । সর্বত্র জয়ধ্বনি দিয়ে পোড়া কাঠকয়লার তিলক কপালে পরার হিড়িক পড়েযায়। করোনার দাওয়াই হিসাবে গ্রামে গঞ্জের মানুষজন কপালে পোড়া কাঠকয়লার তিলক পরতে অতি উৎসাহী হয়েপড়ায় দুশ্চিন্ত বেড়েছে স্বাস্থ কর্তাদের ।
শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাওয়া পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য তাপস কুমার কার্ফা এদিন বলেন সবটাই বুজরুকি কাণ্ড ঘটছে ।পোড়া কাঠকয়লার তিলক পরে করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই মিলতে পারে না । বরং করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে । চিকিৎসকদের পরামর্শই সবাইকে মেনে চলতে হবে । মুখে মাস্ক ব্যবহার করা , এক জায়গায় ভিড়ভাট্টা না করা এবং নিজের হাত সহ গোটা শরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাই করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ বলে তাপস কার্ফা জানিয়েছেন । বিগত কয়েকদিন ধরে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে এই একই উপদেশ দিয়ে চলেছেন রাজ্যের বিশিষ্ঠ চিকিৎসক ও স্বাস্থ দপ্তরের কর্তারা ।কোন গুজবে কান না দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং চিকিৎসকদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে হবে এই অনুরোধ নাগরিকদের কাছে রেখেছেন চিকিৎসকরা । ।